পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে সরকার সেভাবে নজর দিতে পারেননি জানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘আগামীতে আশা করি যথাযথ গুরুত্ব দেব।’

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) প্রথমবারের মতো ‘বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’ পালন উপলক্ষে ভার্চুয়াল সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগ এই সভার আয়োজন করে। জাতিসংঘ ২৫ জুলাইকে ‘বিশ্ব পানিতে ডুবে মুত্যু প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ঈদের ছুটির কারণে অনুষ্ঠানটি আজ বৃহস্পতিবার আয়োজন করা হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি এ বিষয়টি (পানিতে ডোবা) দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে মৃত্যুর অন্যতম কারণ। এ বিষয়ে আমরা সেভাবে গুরুত্ব দিতে পারিনি। আমরা সব সময়ই বিভিন্ন রোগ নিয়ে কাজ করে আসছি। বর্তমানে আমরা করোনা নিয়ে ব্যস্ত। আমরা করোনা রোগীদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেশকে করোনামুক্ত করার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। শিশুমুত্যুর হার, মা মৃত্যুর হার কমিয়ে আমরা এমডিজি অর্জন করেছি। প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন হিরো হয়েছেন। আমরা টিবি ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণেরও চেষ্টা হচ্ছে, ডেঙ্গু বেড়ে যাচ্ছে।’
‘অসংক্রামক ব্যাধি, যেমন হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্যান্সার, কিডনি রোগ- এগুলো নিয়ে আমরা কথাবার্তা বলি, এগুলোর উপর কাজকর্ম বেশি হয়। এর বাইরেও মৃত্যু হয়, সেগুলোর দিকে আমাদের নজর কম। এর মধ্যে পানিতে ডুবে মারা যাওয়াটাও আমাদের দেশে অনেক। সেদিকে আমাদের নজরও অবশ্য কম।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘রাস্তাঘাটেও দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ মারা যায়, সেদিকেও আমাদের নজর আছে। কিন্তু অ্যাকসিডেন্ট অনেক হচ্ছে। পানিতে ডুবে মরাটাও এক ধরনের অ্যাকসিডেন্ট।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানতে পারলাম আমাদের দেশে ১৯ হাজার মানুষের মৃত্যু (বছরে) হয় পানিতে ডুবে। এদের বেশিরভাগই অল্প বয়সের, শিশু। বেশির ভাগ মারা যায় পুকুর ও নদীতে। সমুদ্রে বেড়াতে গিয়েও মৃত্যুবরণ করে। পানিতে ডুবে মারা যাওয়াটা দুঃখজনক। আমরা এটাকে রোধ করতে পারি, কমিয়ে আনতে পারি। বন্যার সময় বেশি পানিতে ডুবে মারা যায়। আমাদের এই অঞ্চলেই বেশি পানিতে ডুবে মারা যায়। গ্রামে ও দরিদ্র পরিবারের শিশুরা বেশি পানিতে ডুবে মারা যায়। কারণ মা কাজে যায়, বাচ্চা আনঅ্যাটেন্ডেন্ট থাকে।’
‘এটা কামানোর উপায় কী? উপায় হলো ছোট বাচ্চাটা যাতে কখনোই আনঅ্যাটেন্ডেন্ট না থাকে। তার সাথে যাতে কেউ থাকে। এটা যদি করা যায়, এ বিষয়ে যদি প্রচার প্রচারণা চালানো যায়, এটা একটা উপায় হতে পারে।’
ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে যেখানে মায়েরা কাজ করে, সেখানে যদি একটা সেন্টার করা যায় জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘বিদেশে এটা আছে, কর্মমুখী মায়েদের জন্য বাচ্চাদের রাখার জায়গা। বাচ্চাকে নিরাপদে কারো কাছে রেখে যেতে হবে। তবে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘করোনায় অনেক প্রোগ্রামকে অ্যাফেক্ট করেছে। করোনা মোকাবিলার কারণে ধীর গতিতে যেতে হচ্ছে। কাজেই আমরা অনেক কিছুতে নজর একটু কম দিতে পারছি। আগামীতে আশা করি যথাযথ গুরুত্ব দেব। আমাদের ছেলেমেয়েকে সাঁতার শেখানোর চেষ্টা নেব।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা।