ইসলামের দৃষ্টিতে নারীদের পর্দা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। পবিত্র কুরআনুল কারীমে ভিন্ন ভিন্ন সূরার ভিন্ন ভিন্ন আয়াতে স্বতন্ত্রভাবেই পর্দার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। পর্দা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে উন্নত ও সভ্য সমাজ ব্যবস্থার একটি নিদর্শন। যার মাধ্যমে সত্যাগত ও জন্মগতভাবে সম্মানিত একজন নারীকে আরো সম্মানিত করে তোলে। ইসলামের দৃষ্টিতে একজন নারীর সম্মান একজন পুরুষের চেয়ে তিনগুণ অধিক। যার কারনে একজন সম্মানিতা নারীকে সম্মানের অনন্য সিংহাসনে অধিষ্ট রাখতে সাম্রাজ্যবিহীন সম্রাঙ্গীর এক প্রজ্জ্বলিত মুকুট বা সম্মানের প্রতীক হলো “হিজাব”

পবিত্র কুরআনুল কারীমে এরশাদ হয়েছে । নবী হে ! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যা গনকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্তক্ত করা হবেনা। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব আয়াত ৫৯) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তিনি বলেন। আল্লাহ তাআলা মুমিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন যখন তারা কোন প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে তখন যেন তারা মাথার উপর থেকে ওড়না বা চাদর টেনে স্বাীয় মুখমন্ডল আবৃত করে।
ইসলামে নারীর পর্দা বা হিজাবের মাধ্যমে একজন নারীকে আবদ্ধ করে ফেলা নয়, বরং সকল প্রকার অন্যায় ও অশালীনতা থেকে মুক্ত রাখতেই হিজাব এক অপরিহার্য অংশ। হয়তো এখন অনেক প্রগতিশীল ব্যক্তিগণ বাঁকা কথার ফুলঝড়িতে প্রশ্ন পানে জর্জরিত করে জিজ্ঞাসিত করবে সমস্ত অশালীনতাকে ছড়ায় কি শুধুই নারীরা? অত্যন্ত বিনয়ের সাথে নম্র কন্ঠে এর জবাব হচ্ছে না। বরং ইসলামে নারীদের পাশাপাশি খুব জোরালো ভাবে পুরুষদের কেউ পর্দা করতে বলা হয়েছে যার অর্থ হচ্ছে দৃষ্টিকে সংযত করা। এবং অসংযত দৃষ্টির অসংগতিপূর্ণ আচরণ এড়াতে মহান রবের পক্ষ থেকে উভয় পক্ষের জন্য কিছু দায়িত্ব রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পুরুষের দৃষ্টি সংযত এবং নারীর শরীর আবৃত।
হয়তো এখনো প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলবে পুরুষের অসংযত দৃষ্টির জন্য নারীকে কি আবদ্ধ হতে হবে বা নারী কেন আবদ্ধ থাকবে? এর জবাব হচ্ছে পায়ে ব্যথা পেলে মুখ দিয়ে কেন ওষুধ খেতে হবে বা হাত দিয়ে কেন মলম দিতে হবে। “পায়ের ব্যথা পায়েই দেখুক না” হয়তো এখন জবাব আসবে পা টা যেহেতু আমার তাই ব্যথা নিরসনের জন্য ওষুধ বা মলম ব্যবহারের জন্য পদ্ধতিটাও আমার।
তাই এখন আপনার কাছে আমার প্রশ্ন: আপনার এই ছোট্ট একটি দেহের ক্ষুদ্র একটি অংশের ব্যথা নিরসনের জন্য যদি একে অন্যকে সাহায্য করতে পারে। (অর্থাৎ এক অঙ্গ অন্য অঙ্গ কে) যেখানে মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলার এত বড় সৃষ্টি গুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলো “নারী এবং পুরুষ” যাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে জোড়ায় জোড়ায় তাহলে তারা কেন মহান স্রষ্টার হুকুম বাস্তবায়নে একে অন্যকে সাহায্য করতে পারবে না? কথায় কথায় ইসলাম বিদ্বেষ মনোভাব নিয়ে বক্তব্যে যারা কবির বুলি ছড়ায় “এই পৃথিবীতে যা চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর” তাহলে ইসলাম মানার ক্ষেত্রে এই উদ্ধৃতি কেন নয়?
মূলত পুরুষগণ দৃষ্টি সংযত রাখার মাধ্যমে সমস্ত অশালীনতা থেকে নারীকে মুক্ত রাখবেন, আর নারীগণ সমস্ত কিছু আবৃত রাখার মাধ্যমে পুরুষের দৃষ্টি সংযত রাখার জন্য সহযোগিতা করবেন। তবেই তো কবির উক্ত উদ্ধৃতি টি ষোল আনায় পরিপূর্ণ হবে।
সম্প্রতি সময়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত, বহুমুখী জ্ঞানের প্রাণকেন্দ্র, বহু রতী মহারথী সারথীদের স্মৃতিধন্য, স্বনামধন্য এশিয়া বিখ্যাত এদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের হিজাব বিতর্কে আবারও খবরের শিরোনাম হয়েছে। যা সত্যিকার অর্থেই দুঃখজনক। যেখানে কতিপয় কিছু সংখ্যক নারী শিক্ষার্থীগণ খোলামেলা পোশাকের পক্ষে আন্দোলন করে বলেছিল আমার পোশাক আমার স্বাধীনতা। সেই একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পোশাকের স্বাধীনতা মুসলিম সম্মানিত হিজাবী নারী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কেন নয়?
মনে রাখা আবশ্যক ইসলামের দৃষ্টিতে হিজাব একজন নারীর সম্মানের প্রতীক। তাই হিজাব নিয়ে বিতর্ক করা একজন নারীর সম্মানকে বিতর্কিত করার শামিল। এবং নারীর পোশাকের স্বাধীনতা হরণের শামিল। অতএব কারণে, এ ধরনের বিতর্কমূল কান্ডে নারীদের সম্মান ও পোশাকের স্বাধীনতাকে হরণ করছে। তাদেরকে আইনের আওতায়েনের শাস্তি প্রদানের প্রয়োজন।
মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা আমাদের সম্মানিতা নারীগণের ইজ্জত আভ্রু ও সম্মানের হেফাজত করুন। ইসলামী মনন চর্চার মাধ্যমে, সম্মান ও কৃতিত্বের সাথে এগিয়ে যাওয়ার দেশ ও জাতি গঠনের ক্ষেত্রে তাদের অসামান্য অবদান রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: হাফেজ মাওলানা মুফতি মূর্তাজা ইবনে মোস্তফা সালেহী।
পরিচালক: আল মোজাদ্দেদিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।