ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৯ আগস্ট ২০২১
  1. অনান্য
  2. অর্থ ও বাণিজ্য
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. ইসলাম
  7. কিশোরগঞ্জ
  8. কুড়িগ্রাম
  9. কুমিল্লা
  10. কুষ্টিয়া
  11. কৃষি
  12. খোলা কলাম
  13. গাইবান্ধা
  14. গাজীপুর
  15. চাকরি
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সাতক্ষীরা জেলার পাড়ায় পাড়ায় বাল্য বিয়ে

350
Tanim Tv
আগস্ট ১৯, ২০২১ ১:৫১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আব্দুস সামাদ: সাতক্ষীরা জেলার পাড়ায় পাড়ায় ঘটছে বাল্য বিয়ের ঘটনা। করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দিন দিন বাল্যবিয়ে আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। বাল্য বিয়ের খবরে প্রতিদিন জেলার কোন না কোন জায়গায় ছুটতে হচ্ছে প্রশাসনকে। ঘটনা স্থলে যাওয়ার পর সত্যতা পেলে করা হচ্ছে জরিমান। কোথাও আবার মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতেও বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে হিমসিম থেকে হচ্ছে। প্রশাসন ঘটনা স্থল ত্যাগ করার পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে বর-কনেকে অন্য স্থানে নিয়ে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিছু অসাধু কাজী টাকার বিনিময়ে এসব বাল্য বিয়ে দিতে সহযোগীতা করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাল্য বিয়ে দেওয়া হচ্ছে না কোন রেজিষ্টি কাগজপত্র।

খোজ নিয়ে যানা যায়, বাল্য বিয়ে বন্ধে জেলা বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটি রয়েছে। যে কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার। ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান। তবে পৌরসভায় কোন কমিটি নাই।
আরও জানা যায়, প্রতিটি ইউনিয়নে বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটি রয়েছে। যে কমিটির সদস্য সংখ্যা ২০ জন। এছাড়া উপজেলা ও জেলা কমিটি রয়েছে। এসব কমিটিতে প্রায় দুই হাজার সদস্য রয়েছে। তবে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটিতে ২০ জন সদস্য থাকলেও সে কমিটিকে তেমন ভূমিকা রাখতে দেখা যায় না। বরং পরোক্ষভাবে সহায়তা করতে দেখা যায়। আর উপজেলা বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটির নিয়োমিত সভা হওয়ার কথা থাকলেও অন্যান্য মিটিং এর সাথে বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটির সভা দেখিয়ে হাজিরায় স্বাক্ষর করিয়ে নেওয় হয়।

খোজ নিয়ে দেখা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা বাল্যবিবাহ নিরোধ যে কমিটি রয়েছে তার সদস্য প্রায় ৪১ জন। এ কমিটির উপদেষ্টামন্ডলীতে রয়েছে সংসদ সদস্য এবং সদর উপজেলা চেয়ারম্যান। কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সদস্য সচিব উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা), ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ), মেয়র প্রতিনিধি, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা/ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, জাতীয় মহিলা সংস্থা সদর উপজেলা কমিটির চেয়ারম্যান, ১৪ টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, পলাশপোল আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ, নবজীবন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ, হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক (রঃ) ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসার সুপার, অগ্রগতি সংস্থা নির্বাহী পরিচালক, সিডব্লিউসিএস নির্বাহী পরিচালক, পৌরসভা একজন ওয়ার্ড কাউন্সিল (মহিলা), জিডিএফ সভানেত্রী, সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিনিধি, দ্যা পোল স্টার পৌর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিনিধি, পৌরসভার ২ ও ৪ ওয়ার্ডের মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার, সদর উপজেলা হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার, সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টাপ ক্রাইসিস সেল প্রোগ্রাম অফিসার ও উপজেলা তথ্যসেবা (তথ্য আপা) কর্মকর্তা (কো’অপ্ট সদস্য)। এই ফরমেটে কমিটি রয়েছে অন্য উপজেলাও।

এদিকে, বাল্য বিয়ে বন্ধে কমিটির সকলের ভূমিকা রাখার কথা থাকলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সমাজসেবা কর্মকর্তা বাদে অন্যদের ভূমিকা রাখতে দেখা যায় না। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদেরও ভূমিকার রাখার কথা থাকলেও তেমন টি দেখা যায় না। এমন কি বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থীর বাল্য বিয়ে হলে সে বিষয়ে প্রশাসনকেও অবহিত করেন না বিদ্যায়ের প্রধান শিক্ষকরা।
খোন নিয়ে জানাযায়, জেলার সাত উপজেলার ৭৮ টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌর এলাকায় কয়েকশ বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে প্রশাসন কয়েকটি বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে পারলেও অধিকাংশই রয়েছে রেছে ধরা ছোয়ার বাহিরে। এ বিষয়ে স্ব স্ব এলাকার কাজীদের দায়িত্ব থাকলেও তারা নানা কৌশলে দিচ্ছেন বাল্য নিয়ে। তবে এ ক্ষেত্রে দেওয়া হচ্ছে না কোন রেজিষ্টি কাগজপত্র।

গত ৬ মাসে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যাদের বাল্য বিয়ে হয়েছে এবং যাদের বিয়ে বন্ধ করতে প্রশাসন জরিমানা করেছে তাদের কয়েক জনের তথ্য তুলে ধরা হলো –
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালী ইউনিয়নের কুশাখালী গ্রামের মোঃ মফিজুল ইসলামে মেয়ে কুশখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী মোছাঃ সাবিনা খাতুন, একই বিদ্যালয়ের ছাত্রী মো. মনিরুল ইসলামের মেয়ে মোছাঃ মুনিয়া সুলতানা, ১০ম শ্রেণির ছাত্রী ছয়ঘরিয়া গ্রামের মোঃ আব্দুল হামিদ মেয়ে মোছাঃ মনিরা খাতুন, নাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণি নারায়নপুর গ্রামের গাজীপাড়ার হাফিজের মেয়ে সাকিবা, ঘোনা পল্লীমঙ্গল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী সাগর মোড়লের মেয়ে রিমা, একই বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণি ছাত্রী নারায়নপুর গ্রামের মোঃ শহিদুল ইসলামের মেয়ে হাজিরা, ১০ শ্রেণির ছাত্রী নারায়নপুর গ্রামের সরদারপাড়ার আঃ সবুর সরদার মেয়ে হামিদার বাল্য বিয়ে হয়েছে।

শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামের রজব আলী সরদারের ছেলে আনোয়ার বিবাহ করেছেন শ্যামনগরের নূরনগর রামজীবনপুর মাদ্রাসা ৮ম শ্রেণির ছাত্রী মরিয়মকে। একই এলাকার ফজর আলী সরদার ছেলে আবদুল্লাহ বিবাহ করেছেন কালীগঞ্জ রতনপুর প্রাইমারি স্কুলের আশেপাশে খুশিকে।
কালিগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের নিজ দেবপুর গ্রামের আঃ জব্বারের মেয়ে উজ্জীবনী ইনস্টিটিউটের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী মরিয়ম বিয়ে হয়েছে একই এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী রাসেলের সাথে। একই বিদ্যারয়ের ১০ম শ্রেণির আর এক ছাত্রী নিজ দেবপুর গ্রামের মোঃ হাফিজুর রহমানের মেয়ে ফারজানা আক্তারের বিয়ে হয়েছে একই এলাকার নাজমুলের সাথে।

আশাশুনি উপজেলার হাজরাখালী গ্রামের সহারাফ মিস্ত্রী মেয়ে তানিয়া সুলতানা ও একই এলাকার মোঃ মিনাজ গাজী মেয়ে রিয়া পারভীরকেও পারিবারিকভাবে দেয়া হয়েছে বাল্য বিয়ে।
এদিকে, গত ১৭ আগস্ট বুধবার দুপুরে তালার উপজেলার সুভাষিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির এক ছাত্রীর আয়োজিত বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠান পন্ড করেছেন তালা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুন নাহার। এসময় অভিভাবকদের খুঁজে না পেয়ে কন্যার চাচা মোঃ মতিয়ার মোড়ল ও ওয়ার্ড মেম্বারের দায়িত্বে ছেলে মেয়েসহ উভয় পক্ষের অভিভাবকের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ে হাজির হতে বলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জানান উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুন নাহার। খোজ নিয়ে দেখা যায় চলতি বছরে সুভাষিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের থেকে প্রায় ১০ জন ছাত্রীর বাল্য বিয়ে হয়েছে।

এদিকে, তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে গত ছয় মাসে বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটেছে ১৪ টি। এর মেধ্যে কয়েকটি মুচলেকা নেওয়া হলেও আটকানো সম্ভব হয় নি বাল্য বিয়ে। স্থানীয় ইউপি সদস্যের সহযোগীতায় এসব বিয়ে হয়েছে বলে জানাযায়। তবে এসব বিবাহের অধিকাংশই দেওয়া হয়নি রেজিষ্টি কাগজপত্র। বাল্য বিয়ে হওয়া অধিকাংশই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী।
গত ১৪ আগস্ট কুলিয়া ইউনিয়নের বহেরা গ্রামে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্রের বাল্য বিয়ে বন্ধ করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার। দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়ের বিয়ে সহযোগীতা করায় মেয়ের মাকে মোবাইল কোর্টের জরিমানা করা হয়।
খোজ নিয়ে আরও জানা যায়, এসব বিয়ের অধিকাংশই দেওয়া হয়নি রেজিষ্টি কাগজপত্র। অনেক ক্ষেত্রে ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে বাল্য বিয়ে। কোর্টে ৬/৭ জন মুহুরি টাকার বিনিময়ে এ কাজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারাও টাকার বিনিময়ে কখনও কখনও ভূয়া আবার কখনও কখনও আসল কাগজপত্র দিয়ে থাকে। এ কাজে সাতক্ষীরা পৌরসভা কাজী শেখ সাইদুজ্জামান ও ব্রহ্মরাজপুরের রওশান আলম সহযোগীতা করে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জর্জ কোর্টের আইনজীবী ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, করোনার কারণে মানুষ ঘর বন্দি, কাজ না থাকা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে বাল্য বিয়ে বেশি হচ্ছে। তাই বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করেত বেশি প্রয়োজন সচেতনতা এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ। আর এ জন্য স্থানীয়দের বেশি বেশি ভূমিকা রাখতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

তালা উপজেলা বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটি সভাপতি ও তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তারিফ-উল-হাসান বলেন, বাল্য বিয়ে বন্ধে তালা উপজেলা জেলার শীর্ষে। তারপরও বাল্য বিয়ে শুণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে আমার বেশি বেশি সচেতনতার কাজ করে যাচ্ছে। কোথাও বাল্য বিয়ের খবর পেলে সেখানে ছুটে যাচ্ছে। অভিভাবকদের স্ট্যাম্পে মুচলেকা নেওয়া হচ্ছে। সচেতন করতে করা হচ্ছে উঠান বৈঠক।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় অভিযোগের কোন প্রমান-পত্র অর্থাৎ রেজিষ্টি কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভবও হচ্ছে না। তারপরও যদি কেউ বাল্যবিবাহ করে থাকে সে বিষয়ে খোজ খবর নিয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোবাইল সিভিন না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সাংবাদিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি! তানিম টিভি লি:  এর  সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য দেশের কিছু (জেলা ব্যতীত) সকল জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মঠ, সৎ ও সাহসী কিছু পুরুষ ও মহিলা সংবাদদাতা/প্রতিনিধি নিয়োগ করা হবে। আগ্রহী প্রার্থীরা পূর্ণাঙ্গ জীবন বৃত্তান্ত ই-মেইলে tanimtvltd.news1@gmail.com