আব্দুল্লাহ আল নাঈমঃ উপজেলার কালিকচ্ছ ঋষি বাড়িতে গত ৬০ বছর ধরে চলছে চোলাইমদ উৎপাদন ও বিপনণের কাজ। বিষয়টি অনেকটা ওপেন সিক্রেট। কারণ এর পেছনে রয়েছে স্থানীয় অনেক প্রভাশালী মহলের মদদ। অনেকে এদেরকে মহাজনি সুদে টাকা দিয়ে সহায়তা করে আসছিলেন। হাতের কাছেই মাদক। ফলে ধ্বংস ও বিপথগামী হচ্ছে সেখানকার শিক্ষার্থী ও যুব সমাজ।

বাঁধা দিলেই হুমকি মামলা ও জেল। ভয়ে তটস্থ প্রতিবাদকারীরা। আইন-শৃঙ্খলা সভায়ও উত্তপ্ত আলোচনা। কোথায় যেন বারবার আটকে যাচ্ছিল ওই মাদকের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা। অবশেষে নেয়া হয়েছে ব্যবস্থা। সরাইল থানায় সদ্য যোগদানকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসলাম হোসেন মাদকের বিরূদ্ধে ঘোষণা করলেন জিরো টলারেন্স। যোগদানের কিছু দিন পরই থানা থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরের ওই চোলাইমদ উৎপাদনের কারখানায় অভিযান করলেন।
কন্টিনসহ উদ্ধার করলেন ৯০ লিটার মদ ও উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম। উৎপাদন ও বিপনণের সাথে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেপ্তার করেছেন ৩ জনকে। স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলেছেন আশপাশের বাসিন্ধারা। বর্তমানে বন্ধ রয়েছে সেখানে মদ উৎপাদন। এখন সেখানে নেই মাদকসেবীদের আনাগোনা। এক সময় রাতে সরব ঋষি বাড়ি এখন একেবারেই নীরব। মাদকের বিরূদ্ধে লড়াকু স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা এমন শান্তি ও স্বস্থি স্থায়ী হবে তো? পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সেখানকার মাদকের বিস্তৃতির বিরূদ্ধে প্রতিবাদ করছিল স্থানীয় কিছু ছাত্র যুবক। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় প্রতিবাদকারীদের মারধর করে মিথ্যা মামলা দিয়ে স্তদ্ধ করার খেলা চলছিল। কারাবরণও করতে হয়েছে অনেককে।
হুমকি ধমকিতে তটস্থ হয়ে পড়েছিল তারা। এমনই এক মূহুর্তে গত ২৪ মে সোমবার দুপুরের দিকে ঋষি বাড়িটি চারিদিকে ঘেরাও করেন এস আই বিল্লাল হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ। অবশ্য এর আগেই বসত ঘরে তালা ঝুলিয়ে সটকে পড়েছিল কয়েকটি পরিবার। ২-৩ ঘন্টা চলে অভিযান। অভিযানকালে মাটির নীচ থেকে মদ তৈরীর সরঞ্জাম,কন্টিনসহ ৯০ লিটার মদ উদ্ধার করা হয়। উৎপাদন ও বিক্রয়ের সাথে জড়িত থাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে কস্তরি রবি দাস (৫০), তার স্ত্রী অঞ্জনা রবি দাস (৩৫) ও মেয়ে চম্পা রবি দাসকে (১৮)। তবে এ অভিযানে খুশি হতে পারেননি মাদক ব্যবসার সাথে গোপনে জড়িত সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালীরা। তারা আবারও মদ উৎপাদনে সহযোগিতার চেষ্টা করছেন।
ওই এলাকার বাসিন্ধা যুবক রাহাত মিয়া (৩২) বলেন, অনেকদিন পর পুলিশ খুবই ভাল করেছেন। কিন’ এখন কিছু লোকের সহযোগিতায় গুরিয়া রাণি রবি দাস গোপনে উৎপাদন করছেন। আর বিক্রি করছে তার ৩ ছেলে মিটন রবি দাস (২২), রিপন রবি দাস (২০) ও টিটন রবি দাস (১৮)। সন্ধ্যার পর কালিকচ্ছ বাজারের একটি জায়গায় বসে তারা কৌশলে চোলাই মদ বিক্রি করছে। কালিকচ্ছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সরাফত আলী বলেন, পুলিশের এ অভিযান গোটা উপজেলার মানুষের উপকার হয়েছে। কারণ এখানকার মদ শাহজাদাপুরের মলাইশ ও শাহবাজপুরেও যায়। কিন’ তারা তো বন্ধ বলেও গোপনে উৎপাদন করে। তাই একটু চিন্তায় আছি। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, মাদকের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স। এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে। ওই বাড়িতে মাদক উৎপাদন ও বিক্রয় কোনটাই হবে না। মদ উৎপাদনের সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।