সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনির গাড়িচালক ছিলেন নাজির হোসেন। থাকেন রাজধানীর করাইলে। দুই মাস আগে নাজির হোসেন পরীমনির গাড়িচালক হিসেবে নিয়োগ পান। পরীমনির টয়োটা হ্যারিয়ার (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫-৯৬৫৩) চালাতেন তিনি। নাজিরের বেতন ১৮ হাজার টাকা হলেও তিনি পেতেন ১৫ হাজার টাকা। বেতনের বাকি তিন হাজার টাকা মেরে দিতেন পরীমনির কথিত মামা আশরাফুল ইসলাম দীপু। এমনকি ঈদের বোনাস হিসেবে পরীমনি তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিলেও দীপু সেখান থেকেও আত্মসাৎ করেন।

পরীমনির কাছ থেকে টাকা নিয়ে গাড়িচালককে নিজ হাতে বেতন দিতেন দীপু। টাকার বিষয়ে সরাসরি পরীমনির সঙ্গে কথা বললে নাজিরের চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন দীপু। চাকরি হারানোর ভয়ে নাজির সরাসরি পরীমনিকে কিছু বলতেও পারতেন না।
গত বুধবার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে আলোচিত নায়িকা পরীমনি ও তার কথিত মামা মো. আশরাফুল ইসলাম দীপুকে গ্রেফতার করেন র্যাবের গোয়েন্দা দলের সদস্যরা। পরদিন বনানী থানায় পরীমনি ও দীপুর বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে র্যাব। নাজিরের বেতন ১৮ হাজার টাকা হলেও এতদিন জানতেন না তিনি। তবে আটকের পর তিনি জানতে পারেন তার বেতন ছিল ১৮ হাজার।
নাজির হোসেন বলেন, ‘গুলশানের অল ক্লাবে ছিল ডিউটির প্রথম রাত। এর পরদিন রাতে ডিউটি ছিল বোট ক্লাবে। আমার সামনে অনেক কিছুই পরীমনি ম্যাডাম করেছেন যা আমি দেখেছি। দুই মাস আগে পরীমনির আগের গাড়িচালক বিদেশ চলে যাওয়ার কারণে আমি নিয়োগ পাই। ভেবেছিলাম নায়িকার গাড়ি চালাবো। এটা কয়জনের ভাগ্যে জোটে। বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বেশিই ভেবেছিলাম। কিন্তু ১৫ হাজার টাকা বেতন পেলেও মনে কষ্ট ছিল না। টাকার কথা না ভেবে নায়িকার গাড়ি চালাচ্ছি এটাই অনেক বড় কিছু মনে করতাম।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম মাসে বেতন পেয়েছিলাম ১৫ হাজার টাকা। এরপর ঈদের আগে দুই হাজার টাকা বোনাস দেন দীপু। ঈদে যদি মাত্র দুই হাজার টাকা বোনাস দেয় তাহলে পরিবার নিয়ে ঈদ করব কীভাবে? এ কারণে দীপুর কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘এত কম বোনাস কেন স্যার? জবাবে দীপু বলেছিলেন, বেশি কথা বইলো না, বেতন-বোনাসের কথা পরীমনির কাছে বললে তোমার চাকরি থাকবে না। এরপর থেকেই সন্দেহ হয় দীপুর বিষয়ে।’ এ ছাড়াও এক মাসের বেতন এখনো পাননি বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘করোনার সময় এমনিতেই অনেক চালকের চাকরি নেই। তাই চাকরি হারানোর ভয়ে পরীমনির কাছে বেতন-বোনাসের কোনোকিছুই জিজ্ঞাসা করি না। এ ছাড়াও দীপু আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, আগামী ৬ মাস ১৫ হাজার করে দেবেন পরীমনি, ৬ মাস পর বেতন বাড়ানো হবে।’
পরীমনি জামিনের পর তার গাড়ি পুনরায় চালাবেন কিনা- জানতে চাইলে চালক নাজির বলেন, ‘পরীমনির গাড়ি আর চালাবো না। শুধু পরীমনিই নয়, আর কোনো নায়ক-নায়িকার গাড়িই চালাবো না। বেতন কম পাই তাতে সমস্যা নেই, কিন্তু সম্মান ও ঝামেলামুক্তভাবে চাকরি করতে চাই।’
গত শুক্রবার (৬ আগস্ট) রাত থেকে পরীমনির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পুলিশ সদরদফতরের এক নির্দেশনায় সিআইডির কাছে মামলাটি হস্তান্তর করা হয়।