পবিত্র মাহে রমজান, দীর্ঘ একটি বছর পর আবারও আমাদের মাঝে ফিরে আসছে। রহমত, বরকত, মাগফিরাত, নাজাত ও মানবতা, মানবিকতা, সহমর্মিতা, একে অন্যের প্রতি রিক্ততা ও ভালোবাসা, দিনভর সিয়াম সাধনা, রাতভর তারাবিহ, তাহাজ্জুদের নামাজ, তসবি তাহলীল, জিকির আজকার, রোজা রাখার নিয়তে সাহরি গ্রহণ করা সারাদিন রোজা রাখার পরে ইফতার সামনে নিয়ে দোয়া কবুল হওয়ার উম্মেদার হয়ে কায়মনা বাক্যে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে ফরিয়াদ করা। এই সকল কিছুই যেন একজন মুমিনের জন্য তার জীবনে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত প্রাপ্তির পুনরাবৃত্তি।

মুমিন মাত্রই সর্বদা মহান আল্লাহতালার কাছে রমজানের নিয়ামত দ্বারা পরিপূর্ণতা পাওয়ার দোয়া করবে। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। রজব মাসের চাঁদ উদিত হলেই দোয়া শুরু করে দিতেন, হে আল্লাহ আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাস কে বরকতমন্ডিত করুন, এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌছিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন প্রকৃত উম্মত বলতেই সর্বদা মাহে রমজানুল কারিমের জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকবে। মহান আল্লাহতালার অপার অনুগ্রহে দীর্ঘ একটি বছর পর আবারও সেই মাহে রমজান আমাদেরকে দান করছেন। তাই গতানুগতিক মাস গুলোর মত মাহে রমজানকে মনে করা সম্পূর্ণরূপে অসমীচীন। যেহেতু মাসটি অত্যন্ত তাৎপর্যবাহ এবং গুরুত্বপূর্ণ তাই মাসটি আসার পূর্বেই এই মাসটিকে ঘিরে আমাদের কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
১, তওবা ইস্তেগফার করা
২, বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত ও তরজমা পড়া, হাদিস ও হাদিস অনুবাদ পড়া, কোরআন শিখা না থাকলে রমজান মাস গেলে কোরআন শিক্ষা করার প্রস্তুতি নেওয়া।
৩, বেশি বেশি জিকির-আজকার করা।
৪, কোরআন সুন্নাহ বর্ণিত রমজানের ফজিলত গুলো অনুধাবনের মাধ্যমে পবিত্র রমজান মাসের গুরুত্ব উপলব্ধি করা।
৫, অধিক পরিমাণে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
৬, পূর্বের ফরজ রোজা যদি কোন প্রকার শরিক কারণবশত কাজা থাকে তাহলে আসন্ন রমজানে প্রবেশ করার আগেই পূর্বের কাজা রোজা গুলো আদায় করে নেওয়া।
৭, রমজানের পূর্ব প্রস্তুতির মধ্যে প্রস্তুতি রাখতে হবে ক্ষমা প্রাপ্ত বা নাজাত প্রাপ্ত দলের মধ্যে অধিক পরিমাণে ক্ষমাপ্রার্থনার মাধ্যমে নিজেদেরকে শামিল করে নেওয়া।
৮, রমজান মাসকে সামনে রেখে পবিত্র রমজান মাসের প্রয়োজনীয় মাসয়ালা মাসায়েল শিক্ষা গ্রহণ করা।
৯, রমজান মাসে অধিক পরিমাণে সদকা করার জন্যেও মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
১০, পবিত্র রমজান মাসে ঘিরে একটি রুটিন তৈরি করা, এবং রুটিন মাফিক দৈনন্দিন অন্য সকল কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে নেক আমল করা।
১১, মাহে রমজানের পবিত্রতা যেন পরিপূর্ণভাবে আদায় করা যায় সেই দিকে সর্বাত্মক সচেষ্টা থাকা।
আর কয়েকদিন বাদেই পবিত্র মাহে রমজান। মহান আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা আমাদেরকে পবিত্র মাহে রমজানের নেয়ামত দ্বারা ধন্য করুন। আমাদের অতীত জীবনের সমস্ত গুনাহগুলোকে ক্ষমা করুন। এবং আমাদের পূর্ববর্তী গনের গুনাহগুলোকে ক্ষমা করুন। সেই সাথে রমজান কারীমের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে মাস ব্যাপি সিয়াম সাধনা করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: মুফতি মূর্তাজা ইবনে মোস্তফা সালেহী।
পরিচালক: আল মোজাদ্দেদিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা।