পবিত্র মাহে রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস গুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি মাস। এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তই মহান আল্লাহতালার পক্ষ থেকে অনন্য এক নেয়ামত। এ মাসটিকে অসংখ্য নেয়ামত দ্বারা সমৃদ্ধশালী করেছেন যার শিরোনাম করণ করা হয়েছে রহমত, মাগফিরাত, নাজাত । এ মাসটির প্রথম দশক রহমত,তথা রহমতের বারিধারা বর্ষিত হয়। এ মাসটির দ্বিতীয় দশক হলে মাগফিরাত, তথা ক্ষমা প্রাপ্ত হয়, অতঃপর শেষ দশক হলো নাজাত, তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত হয়।

বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ মাস রমজান,শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে পবিত্র শবে কদর বা মহিমান্বিত রজনী এর কারণে। কেননা জীবন্ত মোজেজা মহাবিশ্বের মহাবিস্ময় মহাগ্রন্থ আল কোরআন এই রাতেই প্রথম অবতীর্ণ হয়েছিল। মহান আল্লাহতাল এরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মাহাত্ম্যপূর্ণ রজনীতে। আপনি কি জানেন মহিমা ময় রজনী কি? মহিমান্বিত নিশি সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সেই রাত্রিতে ফেরেশতারা রুহুল কুদূস হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন, তাদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সকল বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে, এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষা উদয় পর্যন্ত। (আল কোরআন,সূরা কদর, আয়াত ১- ৫)
“লাইলাতুল কদর” বা “শবে কদর”এর অর্থ হল সম্মানিত মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত রজনী। পবিত্র কুরআন নাজিলের মাস রমজান অতঃপর কোরআন নাজিলের রাত শবে কদর। এই পবিত্র রজনীতেই সর্বপ্রথম পবিত্র মক্কাতুল মোকাররমার জাবালে রহমত বা জাবালে নূর, হেরা পর্বতের গুহায় মহান আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে জিবরীল আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের মাধ্যমে আখেরি নবী, নূর নবী, নবীদের নবী, সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত আহমদ মুজতবা মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ওহীর সূচনা করেন।
শবে কদর বা মহিমান্বিত রজনীর গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করবে তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বোখারী ও মুসলিম)
উম্মাহাতুল মুমিনীন, উম্মত জননী, আম্মিজান আ’য়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন তোমরা লাইলাতুল কদরকে রমজানের শেষ দশকে বিজোড় রাতে তালাশ কর। অর্থাৎ পবিত্র রমজানুল কারীমের ২১,২৩,২৫,২৭,২৯ শে রজনীতে পবিত্র শবে কদর নিহিত রয়েছে।(সহি বুখারী হাদিস ১৮৯০)
পবিত্র শবে কদর রমজানুল কারীমের শেষ দশকের বিজোড় রজনী গুলোতে নিহিত রয়েছে। তবুও মুফাসসিরিন, মুহাদ্দিসিন, ফোকাহাউদদ্বীন, মুসাওউইফিনগন বলেছেন রমজানের ২৬ তারিখ দিবাগত ২৭ শে রজনীতে পবিত্র শবে কদর নিহিত থাকার সম্ভাবনা অনেকাংশে পবিত্র কোরআনে ইঙ্গিত পূর্ন, যা সূরাতুল কদর এর গাণিতিক বিশ্লেষণে প্রমাণ পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে সূরাতুল কদরে বর্ণিত “লাইলাতুল কদর” শব্দটি আরবিতে লিখতে ৯টি অক্ষরের প্রয়োজন, আর উক্ত শব্দটি সূরাতুল কদরে বর্ণিত হয়েছে (৩)তিনবার, তাই মুফাসসিরিন গন গাণিতিক বিশ্লেষণে বর্ণনা করেন ( ৯×৩=২৭) অতঃপর গাণিতিক সূত্র মতে পবিত্র শবে কদর ২৭ শে রজনীতে ইঙ্গিত পূর্ণ। তবে উক্ত বিষয়টি শুধুমাত্র গবেষণা। পরিপূর্ণ বিষয়টি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই ভালো জানেন।
তবে উম্মত হিসেবে পবিত্র রমজানুল কারীমের শেষ দশকে বেজোড় রজনীগুলোতে আমাদের জন্য এবাদত বন্দেগী করা আবশ্যক, সেই সাথে মহান রবের দরবারে বিগলিত হৃদয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে অনুশোচনার দগ্ধ আগুনে ভস্ম হয়ে কায়মনা বাক্যে ফরিয়াদি হয়ে অতীত গুনাহ মাফের জন্য ক্ষমা প্রার্থী হয়ে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট রমজানের শেষ দশকের চেয়ে অধিক প্রিয় আর কোন দিন নেই। আর রমজানের শেষ দশকে সবচাইতে বেশি মর্যাদা পূর্ণ বিষয় হচ্ছে শবে কদর। পবিত্র শবে কদরের রজনীতে মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা অসংখ্য অগণিত মানুষকে ক্ষমা ঘোষণা করবেন। মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলা যেন আমাদের সকলকে এই পবিত্র রজনীতে ক্ষমা ঘোষণা করেন এবং ক্ষমাপ্রাপ্তদের সাথে আমাদেরকেও যেন কবুল করে নেন।
রমজানের শেষ দশকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক পরিমাণে যেই দোয়াগুলো সবচেয়ে বেশি করতেন তার মধ্যে অন্যতম হলো। আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যূন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফূ আন্নি। হে আল্লাহ আপনি ক্ষমা দান কারী, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, অতঃপর আপনি আমাকে ক্ষমা দান করুন। আমিন।
এই রাতের বিশেষ আমল গুলোর মধ্যে যা কিছু করা যেতে পারে, ফরজ সালাতের পর, তারাবি নামাজ,নফল নামাজ, সালাতুত তাসবিহ, সালাতুল হাজত, সালাতুস শোকর, সালাতুত তাওবা, নামাজে দীর্ঘ সময় রুকু সেজদা করা, পাশাপাশি কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার ,তাসবিহ তাহলিল, মোরাকাবা মোশাহেদা,দরুদ ও সালাম, দান সাদাকাত সহ সকল প্রকার ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে অত্যন্ত ভাব গাম্ভীর্যপূর্ণ তার সাথে এই রাতটি কে পালন করতে হবে। ইনশাআল্লাহ
মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা আমাদের সকলকে পবিত্র মাহে রমজানুল কারীম ও পবিত্র শবে কদরের সমস্ত ফুয়ুজু বারাকাত দান করুন, আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী গান সকলের জীবনের সমস্ত গুনাহগুলোকে ক্ষমা দান করুন, আমাদের জীবনে বারবার পবিত্র মাহে রমজানুল কারীম ও শবে কদরের নেয়ামত দ্বারা ধন্য করুন। আমিন।
লেখক: হাফেজ মাওলানা মুফতি মূর্তাজা ইবনে মোস্তফা সালেহী।
পরিচালক: আল মোজাদ্দেদিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা।