পবিত্র কুরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা পৃথিবীর সূচনা থেকে কেয়ামত পর্যন্ত সকল বিষয়ে অবহিত করেছেন মানব জাতিকে। এবং তার মনোনীত শেষ পয়গম্বর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে সতর্কবার্তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বে। মহা ধ্বংসযজ্ঞ মহাপ্রলয় তথা কেয়ামত পুরো পৃথিবী জুড়ে সর্বস্বান্ত করবে আমাদের যত শত আয়োজন। স্বপ্নের এই পৃথিবী মুহূর্তের মধ্যেই হয়ে যাবে ধূলিকণার চেয়েও অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র। আর এটিও হবে ভূমিকম্পের মাধ্যমে।

পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়াল ভূমিকম্পের উপর একটি সূরাই নাযিল করেছেন যার নামকরণ করেছেন সূরাতুল যিলযাল।
যিলযাল শব্দের অর্থই হচ্ছে ভূমিকম্প। উক্ত সূরাটির প্রথম আয়াতেই মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়াল এরশাদ করেন, পৃথিবী যখন প্রবল কোম্পানে প্রকম্পিত হবে। অর্থাৎ ইসরাফিল আলাইহিস সালাম সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার সাথে সাথে পূর্ব দিগন্ত থেকে অগ্নিশিখা সমগ্র মানবজাতিকে পশ্চিমের দিকে ধাওয়া করবে আর তখন এই পৃথিবী ধ্বংস হবে ভূমিকম্পের মাধ্যমে।
অতঃপর দ্বিতীয় আয়াতে বলেন। এবং পৃথিবী যখন তার ভার সমূহ বের করে দিবে। (বহুমুখী ব্যাখ্যা মূলক একটি আয়াত) তবে সর্বজনগৃহীত এই আয়াতে কারিমার থেকে একটি ব্যাখ্যা নেওয়া হয় এইভাবে যে, পৃথিবীর ভূগর্ভে লুকায়িত সমস্ত প্রাচুর্যুকে উপড়িয়ে দিবে, আর গোটা পৃথিবী ধূলিকণার চেয়েও অতি ক্ষুদ্রাদি হয়ে যাবে। তার মানে উক্ত সুরাটি দুইটি আয়াত থেকে স্পষ্ট পৃথিবী ধ্বংস হবে ভূমিকম্পের মাধ্যমে।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন। কেয়ামতের পূর্বে অতি ঘনঘন ভূমিকম্প হবে, ইলেমকে উঠিয়ে নেওয়া হবে (দ্বীন ইসলামের জ্ঞান), সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে, হত্যাকাণ্ড ব্যাপকভাবে সংঘটিত হবে- যে হত্যা করছে সেও জানবে না কেন হত্যা করা হচ্ছে- যাকে হত্যা করা হচ্ছে সেও জানবে না তাকে কেন হত্যা করা হচ্ছে। এবং তোমাদের সম্পদ এত পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে যা উপচে পড়বে, এই কথাটির বাস্তবতা অনেক আর্থিক দুর্বৃত্ত দুর্নীতিবাজ ও অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনকারী আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া ব্যক্তিদের জন্য।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন। যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে। কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে কিন্তু সে তা খেয়ানত করবে। যাকাত কে জরিমানা মনে করা হবে। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে এবং ধর্মীয় শিক্ষাকে তুচ্ছ তাচ্ছিলতার সাথে দেখা হবে। পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে এবং মায়ের সাথে বিরূপ আচরণ করবে। বন্ধুকে কাছে টেনে নেবে পিতাকে দূরে সরিয়ে দিবে। মসজিদে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। জাতির সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসক রূপে আবির্ভূত হবে। সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হবে সমাজ পতি বা নেতৃস্থানীয় কিংবা শাসক। মানুষ খারাপ কাজ করে খ্যাতি অর্জন করবে- ভালো কাজ মূল্যায়িত হবে না। সাধারণ মানুষ খারাপ মানুষদেরকে তাদের খারাপ আচরণের ভয়ে সম্মান প্রদর্শন করবে। বাদ্যযন্ত্র এবং নারী শিল্পীর ব্যাপক প্রচলন হবে। সমাজে অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে- বিয়েকে কঠিন করা হবে এবং বিয়েকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হবে যা একটি বোঝা মনে করা হবে, অতঃপর এমন একটি ভূমিকম্প হবে যা একটি শহরকে তলিয়ে দিবে। অতঃপর তোমরা প্রস্তুত থেকো কেয়ামত তখন খুবই সন্নিকটে। প্রিয় পাঠক মহল ভেবে দেখবেন বর্ণিত আলামত সমূহ গুলোর সাথে বর্তমান সময়ের বাস্তবতা কতটুকু।
সম্প্রীতি তুরস্ক ও সিরিয়া ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প গোটা বিশ্ববাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। বাতাসে ভেসে আসছে লাশের গন্ধ, পুরো শহর জুড়ে মানুষের আর্তনাদ। ক্ষনেই ভাড়ি হচ্ছে লাশের মিছিল। অসংখ্য নারী, শিশু ,যুবক, বৃদ্ধ সকলেই তাকিয়ে আছে খোলা আকাশের নিচে থেকে সুমহান আরশের অধিপতির দিকে একবিন্দু করুণার আশায়। এই দৃশ্য বারবার আমাদের মনে করিয়ে দেয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মুখনিঃসৃত সেই অমিয় ভবিষ্যৎবাণী কেয়ামতের আলামত সমূহ ও কেয়ামত সন্নিকটে। আমরা বলছি না হাদিস অনুযায়ী এটি সেই ভূমিকম্প। তবে এও বলছি না ভূমিকম্প আর হবেনা। হওয়া না হওয়া সবই মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলার অধীনে।
কিন্তু এখনো কি সময় হয়নি আমাদের? আমরা আমাদের রবের দিকে ফিরে আসার? মহান রবের দুয়ার এখনো খোলা আছে। তাই আসুন মহান রবের দুয়ারে ধরনা দিয়ে কায়মনা বাক্যে ফরিয়াদি হয়ে মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করি। মহান আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তাআলা আমাদের সকলকে ভূমিকম্প নামক আজাব এবং কেয়ামতের পূর্বে সকল ফিতনা-ফাসাদ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
লেখক: হাফেজ মাওলানা মুফতি মূর্তাজা ইবনে মোস্তফা সালেহী।
পরিচালক: আল মোজাদ্দেদিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা।