স্বামী-স্ত্রীর মতো একসঙ্গে দীর্ঘদিন বসবাস করার পরও অন্য নারীকে বিয়ে করায় আলী নূর বিস্বাসকে বটি দিয়ে কুপিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করেন আহিনা খাতুন। সাভারের আশুলিয়ায় চাঞ্চল্যকর অটোরিকশা চালক আলী নূর বিস্বাস হত্যা মামলার মূল আসামী আহিনা খাতুন (২৯) কে নারায়নগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪।

র্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল গতকাল রাতে
নারায়নগঞ্জ জেলার কাঁচপুর এলাকায় সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে আহিনা খাতুন (২৯) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আজ বুধবার ৩ আগষ্ট দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর সিও ‘ডিআইজি’ মোজাম্মেল হক জানান, স্বামী-স্ত্রীর মতো একসঙ্গে দীর্ঘদিন থেকেও অন্য “অপর এক” নারীকে বিয়ে করায় আলী নূর বিস্বাসকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে আহিনা।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের কর্মকর্তা আরো জানান,
গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, ভিকটিম আলী নূর বিস্বাস মাগুড়া জেলার শ্রীপুর থানার হোগলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। সে চাকুরির সন্ধানে ২০১৪ ইং সালে ঢাকা শহরে এসে প্রথমে গার্মেন্টসকর্মী হিসাবে কাজ শুরু করেন।
পরবর্তীতে বিগত কিছুদিন যাবৎ অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। আসামীর বক্তব্য অনুযায়ী প্রায় ৩ বছর আগে ভিকটিমের সাথে আসামীর পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে গভীর সখ্যতা গড়ে উঠে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে তারা দু’জনই একসাথে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেয়। এমতাবস্থায় বিবাহ ব্যতিরেকে তারা নিজ নিজ পরিবারকে না জানিয়েই স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে আশুলিয়া এলাকায় বিভিন্ন বাসায় ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করতে থাকেন।
তবে তার বক্তব্যে অনুযায়ী গত ৩ বছরে তারা দু’জন ৫ বার বাসা পরিবর্তন করেছেন। জুলাই মাসের শুরুতে হত্যার শিকার ভিকটিম আলী নূর বিস্বাস কিছু দিনের জন্য মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার গ্রামের বাড়ি গেলে আহিনা খাতুন জানতে পারে যে, গত ১৪/০৭/২২ ইং তারিখে আলী নূর তার গ্রামের বাড়িতে ভিকটিম অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে।
ভিকটিম আলী নূর ১৭ জুলাই ঢাকায় ফিরে আসে। ভিকটিম আলী নূর এর বিয়ের কথা জানতে পেরে “আসামী” অহিনা খাতুন এর মনে প্রচন্ড ক্রোধ এবং প্রতিহিৎসার সৃষ্টি হয়। কিন্তু প্রতিহিৎসা ও ক্রোধের বিষয়টি সে গোপন রেখে ভিকটিম আলী নূর’কে গোপনে হত্যার পরিকল্পনা করে।
তাদের মধ্যকার মান-অভিমান চলতে থাকলেও ভিকটিম গ্রামের বাড়ি হতে আশুলিয়ায় আসার পর আসামী দুরভিসন্ধিমূলকভাবে ভিকটিমকে কৌশলে গত ২৯/০৭/২২ ইং তারিখ আশুলিয়ার জিরাবো নামাপাড়া এলাকায় জনৈক দেলোয়ার বেপারী এর টিনশেড বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করতে শুরু করেন। গত ৩০/০৭/২২ ইং রাতের খাবার শেষে উভয়েই ঘুমিয়ে পড়ে।
কিন্তু আসামী ঘুমের ভান করে থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সে ঘুমায়নি। হত্যার পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক আসামি আহিনা খাতুন সেদিন ভোররাতে ভিকটিম আলী নুর বিস্বাসকে ঘুমন্ত অবস্থায় বটি দিয়ে মাথা, গলা এবং বুকে কুপিয়ে নৃশংশভাবে হত্যা করেন এবং লাশটি কাঁথা চাপা দিয়ে ঘড়ের ভেতর রেখে তার থালা-বাসন, কাপড় চোপর এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি একটি বস্তায় ভরে ভোরে ঘড়ে বাহির থেকে তালা দিয়ে বস্তাটি নিয়ে হেটে প্রথমে জিরাবো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসে।
সেখান থেকে বাস যোগে আবদুল্লাহপুর আসে। আব্দুল্লাহপুর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার বাসযোগে কুড়িল বিশ্বরোডে আসে। পরবর্তীতে কুড়িল বিশ্বরোড হতে বাসযোগে নারায়নগঞ্জের কাঁচপুর এলাকায় গিয়ে সেখানে আসামী আহিনা নিজেকে চাকুরীপ্রত্যাশী গার্মেন্টসকর্মী পরিচয় দিয়ে ২২শ’ টাকা ভাড়ায় জনৈক বয়স্ক ব্যাক্তি মজিবুরের সহযোগীতায় একটি টিনশেড বাসায় ভাড়াটিয়া হিসাবে উঠে আত্মগোপনে যায়। এক পর্যায়ে আহিনা বিবেকের তাড়নায় ৩১ জুলাই বিকালে ভিকটিম আলী নূর
এর মোবাইলের মাধ্যমে ভিকটিমের ভগ্নিপতি জনৈক জাকিরকে জানায় যে, আলী নূর অসুস্থ অবস্থায় আছে তাকে বাঁচাতে তার পরিবার যেন দ্রুত আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় দেলোয়ার বেপারীর টিনশেড ভাড়া বাসায় যান। মোবাইলে সংবাদ পেয়ে ১ আগস্ট ভিকটিমের পরিবারের লোকজন জিরাবো এলাকায় দেলোয়ার বেপারীর ভাড়া দেওয়া টিনশেড বাসায় গিয়ে দেখতে পায় যে রুমের দরজা বাহির হতে তালাবদ্ধ।
তারা বাসার মালিক ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় জানালা খুললে রুমের ভিতর হতে তীব্র দুর্গন্ধসহ মেঝেতে কাঁথা মোড়ানো অবস্থায় চিৎ হয়ে ভিকটিম আলী নূরের লাশ পড়ে থাকতে দেখতে পায়। ঘটনাটি থানায় জানালে আশুলিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে উক্ত ঘরের তালা ভেঙ্গে ভিতর থেকে লাশটি উদ্ধার করেন।
এঘটনায় ২ আগষ্ট ভিকটিম “আলী নুর বিস্বাস” এর বড় ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-৪ আসামী গ্রেফতারে ছায়া তদন্ত শুরু করে।
পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আসামী মোছাঃ আহিনা খাতুন (২৯) কে র্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে নারায়নগঞ্জ জেলার কাঁচপুর এলাকা হতে গ্রেফতার করেন।