সকল কিছুর স্রষ্টা মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা। আসমান, জমিন, চন্দ্র,সূর্য ,গ্রহ, নক্ষত্র সকল কিছুই মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলার অপরূপ সৃষ্টি। আর এই সকল কিছুই তিনি সৃষ্টি করেছেন “কুন ফাইয়া কুন”র কুদরত দ্বারা (অর্থাৎ কুন শব্দের অর্থ হও ফাইয়া কুন শব্দের অর্থ হয়ে যায়) তবে এই সকল সৃষ্টিই মহান আল্লাহ সুবহান ওয়া তা’আলা মানুষের কল্যাণেই সৃষ্টি করেছেন।

আর এত এত শৈল্পিক সৃষ্টির আয়োজন যে মানুষের জন্য সে মানুষকে তিনি কুন ফাইয়া কুন এর মাধ্যমে সৃষ্টি করেনি। বরং সৃষ্টি করেছেন মহান স্রষ্টার নিজ কুদরতের হাতে। এই বিষয়ে হাদিসে পাকে বর্ণিত হয়েছে, “খলাকাল্লাহু আ’দামা বিয়াদিহি আ’লা সুরাতিহি”, অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা আদমকে সৃষ্টি করেছেন নিজ কুদরতের হাতে এবং তার সুরতে। মুহাদ্দিসিনগণ উক্ত অংশটুকুর ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে যে মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা আদম আ:কে অত্যন্ত পরম যত্ন সহকারে নিদারুণ শৈলপিকতার সাথে সৃষ্টি করেছেন।
এবং পরবর্তী আদাম আ: থেকে হাওয়া আলাইহিস সালামা এর সৃষ্টি করেছেন। এবং পর্যায়ক্রমে তাদের থেকে তাদের সন্তানগনকেই বলা হয়ে থাকে আদম সন্তান বা বনী আদম। এবং কোরআনুল কারীমে সুস্পষ্টভাবে সূরা বাকারাতে বলা হয়েছে আদম কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলার নির্দেশে সমস্ত ফেরেশতাগণ আদমকে সম্মান সূচক সেজদা প্রদর্শন করেছেন। এবং অন্যত্র সূরা বনী ইসরাইলের আরো বলা হয়েছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছেন।
কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে। কতিপয় কিছু বিপথগামী মানুষ নিজেদের পূর্বপুরুষের অস্তিত্ব এবং স্রষ্টা প্রদত্ত মানবীয় মর্যাদা কে ভুলে গিয়ে কোরআন-সুন্নাহ বিপরীত বিবর্তনবাদের ভয়াল ছোবলে পর্যদূস্ত হয়ে নিজেদেরকে বানরের উত্তরসূরী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। তাদের পূর্বপুরুষ কেউ লেজ বিশিষ্ট বানর ছিল কিনা জানা নেই। তবে কোন প্রকার সন্দেহ ছাড়াই মহান স্রষ্টার একত্ববাদে বিশ্বাসী, যেকোনো ধর্মের অনুসারী হোক না কেন, বিবেকসম্পন্ন মানুষ বলতেই ডারউইনের এই বস্তা ভরা সস্তা থিওরি “বিবর্তনবাদ” কে সমূলে বিরুদ্ধাচারণ করবে।
বিজ্ঞান নাকি অনুমান?
বিবর্তনবাদের প্রবক্তা বলা হয় মিস্টার চার্লস ডারউইনকে। (১২ ফেব্রুয়ারি ১৮০৯- ১৯ এপ্রিল ১৮৮২)। সমুদ্রপথে বিভিন্ন দেশে সফর করেন। সে সময় তিনি দেখতে পেলেন পাখিরা গাছের মধ্যে গর্ত করে বাসা বাধে। এবং পাখির প্রয়োজন ও গর্তের গভীরতা অনুযায়ী কোন পাখির ঠোঁট লম্বা খাট চিকন বা মোটা হয়ে থাকে। এ থেকে তিনি অনুমান করলেন , যে পরিবর্তিত পরিবেশে টিকে থাকার জন্য প্রাণীরা তাদের শরীরের পরিবর্তন ঘটায়। তবে তিনি তার এক বন্ধুকে বিবর্তনবাদ বিষয়ে তার ধারণা সম্পর্কে জানিয়ে বলেছিলেন যে এই সম্পর্কে আমার কাছে শতভাগ প্রমাণ নাই। এই পরিবর্তন যেহেতু অনেক দীর্ঘ সময় ধরে হয় এমনকি মিলিয়ন মিলিয়ন বছর লেগে যায় তাই এর প্রমাণ দেখা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
তবে তারা বিভিন্ন প্রাণীর ফসিল বা জীবাশ্মকে এই বিবর্তনবাদ এর পক্ষে প্রমাণ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে। অর্থাৎ লাখ লাখ বছর আগে মরে যাওয়া কোন প্রাণীর দেহাবোশেষ বা হাড্ডি দেখে আন্দাজ করা হয় যে প্রাণীটি হয়তো এরকম ছিল। আবার বলা হয় যে *কোন এক প্রজাতির প্রাণী পরিবর্তনের একটি ধাপে হয়তো এরকম ছিল* এটা তো কোন প্রমাণ নয়, খুব বেশি হলে অনুমান হবে। সুপ্রিয় পাঠক মহল-ই গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রকাশ করবেন ডারউইনের এই তথ্য এটি কি আদৌ কোন বিজ্ঞান নাকি অনুমান-?
তারপরেও এই বিবর্তনবাদ তথ্য টিকে অনেকেই সত্য হিসেবে প্রচার করছে এবং বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় তা পড়ানো হচ্ছে বিবর্তনবাদীরা মনে করে মানুষ আর বানর শিম্পাঞ্জির মত একটি প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছে। যেমন তাদের তথ্যমতে পাখি এসেছে ডাইনোসর থেকে। এরকম একেক প্রজাতির প্রাণী কোন না কোন প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছে। কিন্তু আদিম যুগ থেকে কোন মানুষ দেখেনি কোন প্রাণী থেকে কোন প্রাণী বিবর্তিত হতে। আর ল্যাবরেটরীতে কোন দুই প্রজাতির প্রাণীর জিন নিয়ে তৃতীয় একটি প্রজাতির প্রাণী সৃষ্টি করাকে বিবর্তনবাদ বলা হয় না। বিবর্তনবাদ বলা হয় এলোমেলো পরিবর্তন আর প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে কোন প্রাণীর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনকে।
সারা পৃথিবীর ৯৯% চিকিৎসা বিজ্ঞানী মানুষ বানর থেকে এসেছে এ কথা আমি মেনে নিতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এমনকি কোষবিজ্ঞান বা আণবিক বিজ্ঞান দারা-ও বিবর্তনবাদ প্রমাণ করা যায় না। বিবর্তন বাদ যদি কোন প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক বিষয় বস্তু হতো তাহলে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যেমন: চীন, আমেরিকা, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, রোমানিয়া সহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তাদের শিক্ষা কার্যক্রম বা পাঠ্যসূচি থেকে বিবর্তনবাদকে ছুড়ে ফেলতেন না।
তাই শুধুমাত্র অনুমান নির্ভর অবৈজ্ঞানিক কাল্পনিক তথ্য স্কুল, কলেজ , ইউনিভার্সিটি ও মাদ্রাসার পাঠ্যসূচির সিলেবাস হতে পারে না। এতে করে কোমলমতি মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট ও মেধা বিকশিত হওয়ার পরিবর্তে বিকল হওয়ারই সম্ভাবনা অধিকাংশে বেশি। চলমান সময়ে উন্নত ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই বলে আমরা মনে করি। কিন্তু চলমান শান্তি বিনষ্ট করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মেধা ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে একটি অশুভ শক্তি পায়তারা করছে বলে আমরা মনে করছি। তাই সরকারি উচিত ,জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমে বিতর্ক সৃষ্টিকারী তাদের বিতর্কমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতার মাধ্যমে তাদের ব্যাপারে যথাপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমকে বিতর্কমুক্ত রাখা।
এবং একই সাথে কাল বিলম্ব না করে স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি ও মাদ্রাসার জীববিজ্ঞান বই থেকে বিবর্তনবাদকে স্থায়ীভাবে বাতিল করা। এবং পূর্বের নেয় দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জীবনী, বিদায় হজের ভাষণ, ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর জীবনী এবং হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর জীবনী কে বহাল রেখে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ইসলামী নীতি-নৈতিকতা শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা। সর্বদা যে কোন প্রয়োজনে ইসলামী সুশীল চিন্তকগণ জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রম বিতর্কমুক্ত রেখে ত্বরান্বিত করতে এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে প্রস্তুত আছে ইনশাল্লাহ।
লেখক: হাফেজ মাওলানা মুফতি মূর্তাজা ইবনে মোস্তফা সালেহী।
পরিচালক আল মোজাদ্দেদিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।