ঢাকাশুক্রবার , ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  1. অনান্য
  2. অর্থ ও বাণিজ্য
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. ইসলাম
  7. কিশোরগঞ্জ
  8. কুড়িগ্রাম
  9. কুমিল্লা
  10. কুষ্টিয়া
  11. কৃষি
  12. খেলাধুলা
  13. খোলা কলাম
  14. গাইবান্ধা
  15. গাজীপুর

বিজ্ঞানময় মেরাজ

350
তানিম টিভি
ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩ ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী রাসুলগণ প্রেরণ করেছেন। সকল নবী রাসূলগণকে মোজেজা দান করেছেন। যার মাধ্যমে সকল নবীগণ নবুয়াতের সত্যতা প্রমাণের পাশাপাশি মানুষকে হেদায়েতের দিকে ধাবিত করেছেন। এবং এই মোজেজা কোন নবীকে একটি কোন নবীকে দুইটি বা তিনটি কোন নবীকে সর্বোচ্চ নয় টি পর্যন্ত মোজেজা দান করেছেন। কিন্তু সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, নবি কুল শিরোমনি, জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোক রশ্মি, জ্ঞান বিজ্ঞানের সদ্য সফল সকল আবিষ্কারের হাজারের অধিক বছরের পূর্বেই ভূ তথ্য থেকে শুরু করে ঊর্ধ্ব জগতের সকল জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় যে মহান ব্যক্তির পদচরণার চিহ্ন দেখে আজও সকল সফল বিজ্ঞানীগণের মস্তক নত হয়ে আসে, যার প্রতিটি কথা জ্ঞান-বিজ্ঞানের মানদন্ডে উন্নত, চির উন্নত, অতি উন্নত। নব শতাব্দীর এই কালে আধুনিক বিজ্ঞান যেখানে পৌঁছতে পারেনি কিংবা সদ্য পৌঁছেছে সেখানেই হযরত আহমদ মুজতবা মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের পদচারণার সাক্ষ্য পেয়েছে।

এক কথায় বলা যায়, বিজ্ঞানের এমন কোন শাখা নেই, যেখানে হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র পদচারনা নেই। ঠিক পবিত্র মেরাজ রজনী তথা আরবি সপ্তম তম মাসে ২৬ তারিখ দিবাগত রজনী তথা ২৭ রজনী বিজ্ঞানময় আরেকটি মোজেজা সংঘটিত হয়েছিল যার নাম হচ্ছে পবিত্র “মেরাজ” অর্থাৎ ঊর্ধ্ব জগতে ভ্রমণ। মূলত এই ভ্রমণের দুইটি অংশ রয়েছে প্রথম অংশটি হচ্ছে “ইসরা” দ্বিতীয় অংশটি হচ্ছে “মেরাজ” ইসরা ওই অংশটুকু কে বলা হয় যেই অংশে মেরাজ রজনীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদুল হারাম থেকে এক হাজার মাইল দূরত্ব পথ বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফর করেছেন। আর মেরাজ হচ্ছে বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে শুরু করে আরশে আজিম পর্যন্ত সফরকে মেরাজ বলে।

বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণে পবিত্র মেরাজ: মেরাজ পরবর্তী অসংখ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণায় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বশরীরে মেরাজে গমন নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। তাদের মতে নভোমন্ডলের বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করার পেছনে যে সব অসাধারণ গুণাবলী দরকার তা মানবের পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা, পৃথিবীর উপরে মাত্র ৫২ মাইল ব্যাপী বায়ুমণ্ডল রয়েছে, তার উপরে আর বায়ুমণ্ডল নেই। আছে হিলিয়াম, ক্রিপটন, যিয়ন, প্রভৃতি গ্যাসীয় পদার্থ। বায়ুস্তর ভেদ করে এসব হালকা গ্যাসীয় পদার্থের অভ্যন্তরে এসে কোন জীব জন্তুর প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব নয়। কেননা দেহের অভ্যন্তরীণ চাপ ও বহির্ভাগ এর চাপ সম্পূর্ণ পৃথক এই চাপের সমতা রক্ষা করা জীবের পক্ষে সম্পূর্ণ কঠিন। এছাড়াও উর্ধ্ব আকাশে রয়েছে মহাজাগতিক রস্নি ও উল্কাপাতের মত ভয়ংকর ও প্রাণ হরণকারী বস্তুর ভয়। এই যুক্তি প্রদর্শন করে কেটে গেছে শত শত বছর। এবং বিজ্ঞানীদের চোখে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নভভ্রমণ বা মেরাজ উপেক্ষিত হয়েছে।

ইতিমধ্যে বিজ্ঞানীগণ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, যে ঘন্টায় মাত্র ২৫ হাজার মাইল বেগে চলা সম্ভব হলে পৃথিবী ও আকাশের মধ্যকর্ষণীয় স্তর অতিক্রম করা সম্ভব। এই সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞনী, আর্থার্জী ক্লার্ক বলেন, পৃথিবী থেকে দূরত্ব হাজার মাইল দূরে যাবার পর মধ্যাকর্ষণ হ্রাস পেতে থাকে, ১২ হাজার মাইল উপরে একেবারে তা কমে যায়, ১ পাউন্ড ওজন তখন এক আউন্সে পরিণত হয়, এরপর এটি অব্যাহত থাকে, পৃথিবী থেকে আরও দূরে চলে যাওয়ার পর সামনে এগিয়ে যাওয়া আরো সহজ হয়ে যায় তখন।

আকর্ষণ ক্ষমতা যখন মোটেই বোঝা যায় না সে অবস্থানকে শূন্য মাধ্যাকর্ষণ বলা হয়। গতি বিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন ঘন্টায় ২৫ হাজার মাইল বেঁগে ঊর্ধ্বলোকে ছুটতে পারলে পৃথিবীর আকর্ষণ থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। এই গতি মাত্রাকে তারা মুক্ত গতি (space velocity) নাম করন করেছেন।

প্রথমত: বিভিন্ন সিরাত গ্রন্থ এবং হাদিসের আলোকে আমরা জানি যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বোরাক নামক একটি বাহনের ওপর বসে ঊর্ধ্বলোকে গমন করেছিলেন। আরবি শব্দ বারকুন অর্থ বিদ্যুত । আর বোরাক বলতে মূলত বিদ্যুৎ থেকেও অধিক গতি সম্পন্ন বাহন কে বুঝায়। অথএব বিষয়টি স্পষ্ট যে মাধ্যাকর্ষণ যুক্তি দ্বারা পবিত্র মেরাজের মত তাত্ত্বিক ও বিজ্ঞান ঘনিষ্ঠ সম্ভাবনাকে নিবারিত করা বা শুধুমাত্র বিজ্ঞানের খরা যুক্তি প্রদর্শন করে মেরাজকে অস্বীকার করা কথিত বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানীদের জ্ঞানের মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়। যেখানে আধুনিক বিজ্ঞান নত মস্তকে মেরাজ শরীফকে মেনে নিয়েছে।

বস্তুত সময় সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান ও ধারণা আপেক্ষিক। সময়ের প্রভাব সবার উপর সমান নয় বলেই আইনস্টাইন বলেছেন,There is no Standard Time, all time is local. দর্শকের গতির তারতম্যে বস্তু বা ঘটনার স্থান নির্ণয় তারতম্য ঘটে। আবার একই সময়ে বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত দুটি ঘটনা দর্শকের গতির তারতম্যে বিভিন্ন সময় সংঘটিত হচ্ছে বলে মনে হয়। গতির মধ্যে সময় অস্বাভাবিকভাবে খাটাে হয়ে যায়। সময় সম্পর্কে আমাদের ধারণা এই আপেক্ষিকতা গতি সম্বন্ধীয় স্বতঃসিদ্ধির উপর আপতিত হলে যে ফলাফল দাঁড়ায় তা হলো স্থান ও কাল আমাদের উপলব্ধিটা একটা গোলক ধাঁধার মধ্যে আপতিত বলে মনে হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা তা নয়। আলোকবিজ্ঞানের আবিষ্কারের ফলে এটা আজ সবার জানা যে আলোক রশ্নি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল অতিক্রম করে। আলোর গতির সাথে কোন বস্তুর গতির সামঞ্জস্যের তারতম্যই( degree of dispersion) সময়ের তারতম্য ঘটার অন্যতম কারণ।

দ্বিতীয়তঃ উপরের বৈজ্ঞানিক তথ্যের আলোকে মেরাজের ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বোরাক আরোহী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর গতির মাত্রা এত বেশি ছিল যে সব ঘটনাই পৃথিবীর দর্শকের কাছে কয়েক মুহূর্তের ঘটনা বলে মনে হলেও কালের প্রবাহে তা ছিল দীর্ঘ সময়। আল্লাহ মানুষকে যে সামান্য জ্ঞান বুদ্ধি দিয়েছেন সেই বিবেক-বুদ্ধির ফল হচ্ছে বিজ্ঞান। তাই নির্দ্বিধায়কপটে বলা সম্ভব বিজ্ঞান হচ্ছে শশীম আর মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলার শক্তি বা ক্ষুদ্রত হচ্ছে অসীম। তাই শসীম দিয়ে অসীমকে পরিমাপ করা এটি নিছক বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। বিজ্ঞানের যেমন নিত্য নতুন তথ্য উপাত্ত প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন গবেষণা উপস্থাপন করতে থাকে। তাই মনে রাখা উচিত শুধুমাত্র বিজ্ঞান দিয়ে আল্লাহর কুদরতকে পরিমাপ করা এটি কখনো সমীচীন নয়। তাফসীরে কুরতুবীতে মোজেজার পাচটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখিত হয়েছে। যার প্রথমটি হচ্ছে আল্লাহর কুদরতের প্রকাশ। আর মহান আল্লাহ তাআলার কুদরত কি কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হতে পারে? কুদরত মানেই হচ্ছে যার সামনে সকল শক্তি খর্ব হবে, সকল যুক্তি পন্ড হবে, সকল মস্তক নত হবে।

মূলত মেরাজের ঘটনা আমাদের চিন্তা ও কল্পনাকে বিস্তৃত করে এবং মহাবিশ্ব নিয়ে আমাদের ধারণাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ও উন্নত করে মেরাজ সম্বন্ধে চিন্তা করলে হৃদয় পবিত্র হয়। ঐতিহাসিক মোজেজা মেরাজ শরীফ আমাদের লক্ষ্য ও গন্তব্যের সন্ধান দেয়, স্রষ্টার সৃষ্টি এবং স্রষ্টার অসীম ক্ষমতার সাক্ষ্য দেয়, বৈজ্ঞানিকভাবে মেরাজের গবেষণার মাধ্যমে, নাস্তিক্যবাদ বা নাস্তিক্য মনোভাবাপন্নতার গণ কবর রচনা হয়। পবিত্র মেরাজ আমাদের ঈমানকে দৃঢ় করে, মহান স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য কে বাড়িয়ে তোলে, মহান আল্লাহ তা’আলার প্রতি মস্তক নত করে, হাবিব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা রেখে এবং অসংখ্য দরুদ ও সালাম প্রেরনের মাধ্যমে এবং মেরাজের প্রতি পূর্ণ ঈমান এবং বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআলা দরবারে ফরিয়াদ করছি আল্লাহতালা যেন আমাদেরকে পবিত্র মেরাজের পরিপূর্ণ তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করেন। আমিন।

লেখক: হাফেজ মাওলানা মুফতি মূর্তাজা ইবনে মোস্তফা সালেহী।

পরিচালক: আল মোজাদ্দেদিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা।

সাংবাদিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি! তানিম টিভি লি:  এর  সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য দেশের কিছু (জেলা ব্যতীত) সকল জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মঠ, সৎ ও সাহসী কিছু পুরুষ ও মহিলা সংবাদদাতা/প্রতিনিধি নিয়োগ করা হবে। আগ্রহী প্রার্থীরা পূর্ণাঙ্গ জীবন বৃত্তান্ত ই-মেইলে tanimtvltd.news1@gmail.com