ঢাকাশুক্রবার , ২৮ জুলাই ২০২৩
  1. অনান্য
  2. অর্থ ও বাণিজ্য
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. ইসলাম
  7. কিশোরগঞ্জ
  8. কুড়িগ্রাম
  9. কুমিল্লা
  10. কুষ্টিয়া
  11. কৃষি
  12. খেলাধুলা
  13. খোলা কলাম
  14. গাইবান্ধা
  15. গাজীপুর

বরকতময় আশুরা ও হৃদয়বিদারক কারবালা

350
তানিম টিভি
জুলাই ২৮, ২০২৩ ৯:২০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আরবি হিজরী সনের প্রথম মাস হলো মুহাররমুল হারম, মহান আল্লাহতালার পক্ষ থেকে বছরের প্রতিটি দিন, মাস ও মুহুর্তই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যেও আরবি হিজরী সনের চারটি মাসকে সম্মানিত করেছে তার মধ্যে অন্যতম একটি সম্মানিত মাস হলো মহরম মাস। এ মাসের মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন “ইয়াওমুল আশুরা”তথা দশই মহরম, আরবিতে “ইয়াওমুন” শব্দের অর্থ হল দিন “আশুরা” শব্দের অর্থ হলো দশ।

পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে মহান আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তা’আলা সূরাতুল ফজর এর দ্বিতীয় আয়াতে “শপথ দশ রজনীর”বলে শপথ করেন। কথেক মুফাসসিরীন গন বর্ণনা করেন কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালার যেই ১০ রজনীর শপথ করেছেন সেটি হল মহররম মাসের প্রথম ১০ রজনীর শপথ । যার কারণে পবিত্র আশুরার দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনটিকে আশুরা নামকরণের পিছনে মৌলিক কারণ হলো এদিনে মহান আল্লাহ তা’আলা নবীগণের মাধ্যমে বড় বড় ১০ টি ঘটনা সংঘটিত করেছিলেন।১, হযরত আদম আলাইহিস সালাতু সালাম কে সৃষ্টি এবং প্রথম মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করার দিনটি ছিল পবিত্র আশুরার দিন। ২, এদিনেই হযরত নূহ আলাইহিস সালাম এর নৌযানের যাত্রারম্ভ ও বন্যা ব্যবস্থার সমাপ্তি।৩, নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর মুক্তি। ৪, হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেট থেকে রক্ষা। ৫, হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম জালুত বাহিনীর উপর বিজয় লাভ। ৬, হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম ১৮ বছর অসুস্থতার পর, অসুস্থতা থেকে মুক্তি লাভ।৭, হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি লাভ, এবং কুখ্যাত স্বৈরাচার ফেরাউন বাহারে কালজুম (নীলনদে) ডুবে মৃত্যুবরণ।৮, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম সিনাই পর্বতে মহান রবের পক্ষ থেকে তাওরাত প্রাপ্ত হওয়া। ৯, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে চতুর্থ আসমানে তুলে নেওয়া। ১০, এই দিনেই পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা করা হয়েছিল, অতঃপর এই দিনেই আবার তাহা ধ্বংস করা হবে। উপরোক্ত বিষয়গুলো সহ অসংখ্য বিষয়ের স্মৃতি জড়িয়ে আছে পবিত্র এই আশুরার দিনটিকে ঘিরে।

কিন্তু পূর্বযুগের সকল ইতিহাসকে ঝাঁপিয়ে পবিত্র আশুরার দিন সবচাইতে বেশি স্মৃতিচারিত হয় ৬১ হিজরী ১০ই মহরম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র দৌহিত্র হযরত আলী রাঃ আনহু এর আদরের দুলাল জান্নাতি রমণীদের সরদারিনী নবী নন্দিনী হযরত মা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহার নন্দন আহলে বায়াতের অন্যতম সদস্য জান্নাতি যুবকদের সরদার বিশ্ব মুসলিমের নয়ন মনি হযরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আশুরার দিবসে কারবালার প্রান্তরে কুখ্যাত পাপিষ্ঠ মধ্যপায়ী , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়ত কি অস্বীকারকারী কাফের জাহান্নামী ইয়াজীদ লানতুল্লাহি আলাইহি ও তার আজ্ঞাবহ বিপথগামী মুসলিম আদর্শ বিবর্জিত ও ঈমানের দৌলত বঞ্চিত মুসলিম নামধারী ২২ হাজার ইয়াজিদি সশস্ত্র সৈন্যদল , মাত্র ৭২ জন নিরস্র নিরীহ নবী পরিবার ও নবী দৌহিত্র মজলুমে কারবালা ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে নিষ্ঠুর নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে কারবালার প্রান্তরে ফোরাতের পারে শহীদ করে দিয়েছেন।( ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) তাদের নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার হাত থেকে রেহাই পায়নি ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর কনিষ্ঠ সন্তান ৬ মাসের দুগ্ধ পোষ্য শিশু সন্তান হযরত আলী আজগর ( রাঃ)ও।

কারবালার এই নির্মম ইতিহাস আজও মুসলমানদের অন্তরগ্ধিত করে। কারবালা এটি আরবি শব্দ “কারবুন” শব্দের অর্থ সংকট “বালা” শব্দের অর্থ মুসিবত। অর্থাৎ সংকট ও মুসিবতের স্থান। কুফার একটি প্রাচীন নদী যার নাম ফোরাত এই নদীর কূল ভেসেই অবস্থিত কারবালা। ইমাম পরিবার যখন কুফা বাসীদের আমন্ত্রণে ৭২ জন সফরসঙ্গী নিয়ে মুসাফির অবস্থায় কুফা নগরীতে প্রবেশ করেন ক্লান্ত পরিশ্রান্ত অবস্থায় লক্ষ করলেন বছরকাল ধরে কুফা নগরী থেকে শত সহস্র চিঠির মাধ্যমে যারা ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে তারাও আজ বিরূপ আচরণ প্রদর্শন করছে। এক পর্যায়ে তিনি চিঠি প্রেরণকারীদের নাম ধরে ধরে তিনি বললেন কোথায় আজ তোমরা-? চিঠি প্রেরণ করেছিলে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে, কিন্তু আজ যখন আমি এলাম তখন তোমাদের এই অসহযোগীমূলক আচরণ আমাকেও আমার পরিবারকে তথা নবী পরিবারকে ব্যথিত করছে।

উপায়ান্তর সেদিন তারা আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন ফোরাত নদীর কূল ঘেষা কারবালার প্রান্তরে উদ্দেশ্য ছিল খাদ্য রসদ হীন নিরস্র নিরীহ মানুষগুলো ফোরাতের পানি পান করে সংকটের দিনগুলো পার করবে, কিন্তু তাতেও বাধ সেদেছে ইয়াজিদের আজ্ঞাবহ সেনাপ্রধান ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ। ৩ হাজার সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা ঘিরে রাখে, উদ্দেশ্য ছিল যেন নবী পরিবার এক ফোঁটা পানীয় পান করতে না পারে। হায় আফসোস! হায় আফসোস!!

যিনি আমাদেরকে হাউজে কাউসার পান করাবেন, যাদের নেতৃত্ব আমাদেরকে জান্নাতে রাখবেন, শুধুমাত্র তাদের পরিবারের জন্যই ফোতের পানি নিষিদ্ধ, অথচ কত পশুপাখি সেদিন ফোরাতের পানি পান করেছিল। নিজেদের জন্য নয়, বরং দুদ্ধ পোষ্য ৬ মাসের শিশু আলী আজ়গর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর জন্য সামান্য এক মসক পানি আনতে গেলে ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর কোলে থাকা ছয় মাসের শিশু সন্তানকে লক্ষ্য করে ইয়াজিদের নির্মম নিষ্ঠুর তীরন্দাজদের নির্ভুল নিশানায় বিষাক্ত তীরের আঘাতে ইমাম পাকের কোলেই তার কনিষ্ঠ পুত্র ইমাম আলি আসগর রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহুর কণ্ঠনালী ছেদ করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। এমনিভাবে নিরস্ত্র নিরীহ ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর সহ আহলে বাইতের ৭২ জন পুরুষ সদস্যকে শহীদ করে দেয়া হয়। তারা শুধু শহীদ করেই ক্ষান্ত হননি। ৭২ জন আহলে বায়েতের দেহ থেকে মাথা আলাদা করা, এমনকি ইমামপাকের পবিত্র দেহ মোবারককে ঘোড়া দিয়ে দলিত মথিত করা। তার পবিত্র নূরানী মস্ত মোবারক দেহ থেকে আলাদা করে সেই মস্তকে সারাব পান করা, ছিন্নমস্তককে লাঞ্ছিত করার উদ্দেশ্যে বললম এর মাথায় করে কোফা থেকে দামেস্ক পর্যন্ত ইয়াজিদের কাছে আনা। ইয়াজিদ ও আর কম কি-? সেও সেদিন ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু র নূরানী ঠোঁট মোবারক এর মধ্যে লাঠি দিয়ে আঘাত করে তাচ্ছিল্লতার কন্ঠে বলেছিল পূর্ব পুরুষদের হিসাব চুকিয়েছি। সেই নির্মমতা নিষ্ঠুরতা ঈমানদার মাত্রই আজও আমরা সইতে অপারগ।

মূলত কারবালার সেই ইতিহাস, অসত্যের উপর সত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ইতিহাস। ইতিহাস থেকে শিক্ষা হলো অসত্যের সাথে কখনো সত্য আপোষ করে না। অসত্য যত শক্তিশালী আর স্থায়ী হোক না কেন, বাস্তবে তা অতি ক্ষণস্থায়ী। যার বড় প্রমাণ কারবালার এই নির্মম ইতিহাস। আল্লামা ডক্টর ইকবাল বলেছিলেন। “কাতলে হোসাইন আসলি মে ইয়াজিদ মারগায়ী, ইসলাম জিন্দা হোতা হে হার কারবালা কি বাত”বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইমাম হোসাইন শাহাদাত বরণ করেছে, তিনি সত্য ন্যায়ের মূর্ত প্রতীক হওয়ায় শাহাদাত বরণ করার পরেও ঈমানদারগণ তাকে মন ভরে স্মরণ করছে। অপরদিকে পাপিষ্ট স্বৈরাচার দাম্ভিক অহংকারী জাহান্নামী ইয়াজিদ ক্ষমতায় থাকার পরেও কারবালার এই নির্মমতার পর থেকে আজও পর্যন্ত মানুষ তাকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করছে, এবং কেয়ামত পর্যন্ত ঈমানদারগণ তা করে যাবে।

মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা আমাদের সকলকে, পবিত্র আহলে বায়াতগণকে সম্মানের সাথে ভালোবাসার তৌফিক দান করুন। এবং তাদের রুহানি ফিউচার আমাদেরকে নসিব করুন। কেয়ামতের কঠিন ময়দানে তাদের শাফায়াত আমাদেরকে দান করুন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফায়াত ও হাউসে কাউসার আমাদেরকে নসিব করুন। জান্নাতে ইমামে হাসনাইন কারীমাইনের সাথে থাকার নেয়ামত আমাদেরকে দান করুন । আমিন

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলসমূহ গুলোর মধ্যে অন্যতম মহরম মাসের ৯ -১০ অথবা ১০-১১ তারিখে রোজা পালন করা।

মুফতি মোহাম্মদ মূর্তাজা ইবনে মোস্তফা সালেহী।
পরিচালক: আল মোজাদ্দেদিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

সাংবাদিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি! তানিম টিভি লি:  এর  সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য দেশের কিছু (জেলা ব্যতীত) সকল জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মঠ, সৎ ও সাহসী কিছু পুরুষ ও মহিলা সংবাদদাতা/প্রতিনিধি নিয়োগ করা হবে। আগ্রহী প্রার্থীরা পূর্ণাঙ্গ জীবন বৃত্তান্ত ই-মেইলে tanimtvltd.news1@gmail.com