হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যাহা সামর্থ্যবান মুসলিম নর-নারীর উপর ফরয করা হয়েছে, আর এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত টি সুসম্পন্ন করার জন্য আর্থিক, শারীরিক-মানসিক ভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করাও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। তাই সম্মানিত আল্লাহর মেহমান গনের জন্য হজ ও ওমরা পালনের বিশেষ কিছু বিষয়ের প্রস্তুতি রাখা আবশ্যক।

১, প্রথমেই ঈমান বা আকিদা-বিশ্বাসের সংশোধন সঠিক রাখা আবশ্যক পবিত্র হজ কে নিছক কোন ইবাদত মনে না করে বরং ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ মনে করে অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণতার সাথে গুনাহ মাফের উম্মিদ্বার হয়ে সমস্ত ইবাদতের এককছত্র অধিপতি একমাত্র মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা কে মনে করে তাহার-ই সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে পবিত্র হজ ও ওমরার নিয়ত করা। মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে কুফরী করবে তার আমল নষ্ট হয়ে যাবে সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে (সূরা মায়েদা আয়াত ৫) পবিত্র হজের মত ফরজ ইবাদত পালনের আগে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর আকীদা-বিশ্বাস বিশুদ্ধ করা অতীব জরুরী বিষয়, কুফর, শিরক, বিদআত ও ভ্রান্ত আকিদা বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসা একান্ত আবশ্যক, তাই হজ ও উমরা পালনের জন্য ইসলাম বিশ্বাসী ব্যক্তির ওপর শিরক মুক্ত ঈমানী চেতনা থাকা জরুরি তবেই বান্দার ছোট-বড় সকল আমল আল্লাহর কাছে কবুল হবে কারণ আকিদা বিশ্বাসের উপর সকল আমল কবুল হওয়া নির্ভরশীল । হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম ইরশাদ করেন আল্লাহ তা’আলা বলেন আমি শিরক কারীদের শিরক থেকে মুক্ত যে ব্যক্তি কোন আমল করে আর তাতে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে শরিক করে আমি তাকে এবং তার শরীরকে বর্জন করি (মুসলিম শরীফ)
২, বৈধ সম্পদ সংগ্রহ,
ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল রুজি তথা হালাল পথে উপার্জিত সম্পদ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা’আলা পবিত্র তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া কবুল করেননা, অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ উপার্জনকারী কে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট, অবৈধ পথে উপার্জিত সম্পদ দিয়ে হজ করে সাওয়াব লাভ করার আশাকরা কূফরি, কারো খাদ্য-পানীয় ও পোশাক যদি হারাম দারা হয়ে থাকে তাহলে তার সকল ইবাদত বন্দেগী মাকাল ফল মাত্র। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন যদি কোন ব্যক্তি এক লোকমা পরিমাণ হারাম খাদ্য তার পেটে থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তাহলে নিঃসন্দেহে ওই ব্যক্তি জাহান্নামী, তাই পবিত্র হজ্জের মতো মৌলিক ইবাদত যদি কোন ব্যক্তি অবৈধ পথে উপার্জিত সম্পদ দিয়ে পালনকরে আর এমতোঅবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন নিঃসন্দেহে তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
৩, হজ্জ প্রশিক্ষণ,
হজে যাওয়ার আগে হজ-ওমরা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ নেওয়া জরুরী। প্রশিক্ষণ ছাড়া হজে গেলে এর রোকন ও বিধানগুলো যথাযথভাবে পালন করা কঠিন হয়ে পড়ে। হজ পালন কালে অনেকে ভুল করে ফেলেন যে কারণে অনেক কাফফারা আদায় করতে হয় এবং যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে হজ সুসম্পন্ন করা অনেকাংশেই কঠিন হয়ে পড়ে। সুতরাং হজে যাওয়ার প্রারম্ভে বিজ্ঞ আলেম ওলামা গনের নিকট হতে হজ সম্পর্কে যথাযথ প্রশিক্ষণ নেওয়া হজের প্রস্তুতির অংশ।
৪, হজের কাফেলা,
হজে যাওয়ার জন্য যোগ্য কাফেলার বিকল্প নেই যারা হজে যাবেন তাদের হজ ও ওমরাহ সম্পর্কিত বিষয়াবলী তদারকির জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন মুয়াল্লিম বা গাইড আবশ্যক। উপযুক্ত কাফেলা সংগঠিত না হলে সুন্দর ভাবে হজ্ব সম্পাদন করা কঠিন হয়ে পড়ে তাই সুন্দরভাবে হজ সম্পাদনের জন্য উত্তম কাফেলা গঠন করা জরুরি ।
৫, পবিত্র হজ্ব ও উমরার আহকাম জেনে নেওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেখানো পদ্ধতি ও রীতিনীতি অনুসারে হজ সম্পাদন করতে হবে হজের জন্য প্রয়োজনীয় হুকুম-আহকাম নিয়ম পদ্ধতি গুলো সঠিকভাবে জেনে নিতে হবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পদ্ধতি অনুসরণ করা ছাড়া হজ করলে তা কবুল হবে না। হাদীস শরীফে এসেছে রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন তোমরা তোমাদের হজের পদ্ধতি নিয়ম রীতিনীতি আমার কাছ থেকে গ্রহণ করো (বাইহাকী ,মুসলিম, মিশকাত) মনে রাখতে হবে হজ ও ওমরার অর্থ হলো মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জন করা তাই আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো রীতিনীতি অনুযায়ী নির্ধারিত কার্যক্রম সম্পাদন করা। বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা, সাফা মারওয়া সায়ী করা, আরাফায় অবস্থান করা, মুজদালিফায় রাত্রি যাপন করা, শুকরানা দম বা কুরবানী আদায় করা সহ ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল, মুস্তাহাব সকল ইবাদত গুলোকে যথাযথভাবে বুঝে বুঝে পরিপূর্ণ ভাবে আদায় করার বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা পবিত্র হজ্জ ও ওমরার প্রস্তুতি গ্রহণের বিশেষ অংশ।
মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা সকল মুসলিম উম্মাহকে হজ ও ওমরার কাজগুলো যথাযথভাবে আদায় করার লক্ষ্যে উল্লেখিত প্রস্তুতি গুলো সম্পাদন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
আলোচক: হাফেজ মাওলানা মুফতি মূর্তাজা ইবনে মোস্তফা সালেহী
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক :আল মোজাদ্দেদীয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।