আশিকুর রহমান :- নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানাধীন নুরালাপুর ইউনিয়নের জিরকুটিয়া গ্রামে চাঞ্চল্যকর মেহেদী হত্যার প্রতিবাদে ও পুণরায় তদন্তের দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ৭ ফেব্রুয়ারী সোমবার বিকাল ৪টায় নুরালাপুর ইউনিয়নের জিরকুটিয়া গ্রামবাসীর ব্যানারে উক্ত মানববন্ধনে নিহতের পিতা মোঃ আলী হোসেন, মাতা ফাতেমা বেগম, মামা দ্বীন মাহমুদ ও আওলাদ হোসেন, চাচা রবিউল মিয়া, নিহতের বড়ভাই রফিকুল ইসলাম, বোন মরিয়ম ও হামিদা, আকরাম হোসেন, সুজন মিয়া, নবী হোসেন ও হাফিজুর রহমানসহ গ্রামের প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ এতে অংশ নেয়। এসময় তারা মেহেদী হাসান হত্যার প্রতিবাদ এবং হত্যা মামলার পূণরায় তদন্ত দাবি করেন। হত্যা মামলার বাদী হোসেন আলী বলেন :- আমার সন্তান মেহেদী হাসানকে হত্যা করে আজাহার। সে গ্রামের কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু। তার ভয়ে গ্রামের মানুষ মুখ খুলেনা। আমার বসতভিটার সাড়ে ৭ শতাংশ জায়গা ২০১০ সালে গাফ্ফার ও একাবর আলীর নিকট থেকে আমি খরিদ করে দীর্ঘদিন যাবত আমার স্ত্রী- সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছি। হঠ্যা করে মাটিয়ালাকান্দা পাড়া গ্রামের মৃত হারেজ মিয়ার ছেলে ৮/৯ বছর পর দাবী করে যে জায়গা তার। এনিয়ে বেশ কয়েকবার আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলো এবং আমাকে বেশ কয়েকবার মারধর করে জায়গায় ছাড়ার জন্য। আমি তার কথায় কান না দেওয়াতে বিগত ২৮ জানুয়ারী ২০২০ খ্রি. দিবাগত রাতে পাশ্ববর্তী গ্রামে ওয়াজ মাহফিল থেকে ফেরার পথে আমার ছেলে মেহেদীকে মারধর করে বিষাক্ত ক্যামিকেল মুখে দিয়ে আহত করে রাস্তায় ফেলে রাখে। দীর্ঘ ৭ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় নরসিংদী জেলা হাসপালে সে মারা যায়। তিনি আরও বলেন, আমি মাধবদী থানায় গিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০ খ্রি. আজাহার কে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই সুবল টাকার বিনিময়ে আমার ছেলে হত্যার মামলা থেকে আজাহার কে বাদ দেয়। যে আজাহারের জন্য আমার ছেলেকে হারিয়েছি আর তাকেই কিনা মামলার চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হলো? এ কেমন দেশে বাসকরি আমরা? তদন্তকারী অফিসারের জন্য আজ আমার ছেলে হত্যার বিচার পাচ্ছি না। এসআই সুবল আসামী আজাহারের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছে। তাই আজ আমার ছেলে হত্যার বিচার অন্ধকারে। আমার মৃত্যুর আগে কি আমার ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারবো? আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রশাসনের নিকট আকুল আবেদন করছি খুনি আজাহারকে আমার ছেলে হত্যা মামলার আসামী করে পুনরায় চার্জশিট দেওয়ার জন্য। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন অসহায় সন্তান হারানো পিতা মামলার বাদী হোসেন আলী। এবিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, হোসেন আলীর সাথে মৃত হারেজ মিয়ার ছেলে আজাহারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জায়গা নিয়ে বিরোধ চলছিলো। বেশ কয়েকবার আজাহার হোসেন আলীকে মারধর ও হুমকি দিয়ে আসছিলো। কিছুদিন পর হোসেন আলীর তৃতীয় ছেলে মেহেদীকে হত্যা করা হয়। পরে হোসেন আলী মাধবদী থানায় আজাহারকে আসামী করে মামলা করে। পরে শুনতে পারি অত্র মামলা হতে এসআই সুবল আজাহারের নাম বাদ দেয়। তিনি আরও বলেন, হোসেন আলী অত্যন্ত গরীব একজন মানুষ। সে এলাকায় লাকড়ি ব্যবসা করে সংসার চালায়। তার তৃতীয় ছেলে মেহেদী অত্যন্ত নর্ম ভর্দ্দ স্বভাবের ছিলো। সে স্থানীয় পাওয়ালুম ফ্যাক্টরির শ্রমিক ছিলো। তার এই মৃত্যুতে গ্রামের মানুষ শোকাহত। উল্লেখ্য, মোঃ হোসেন আলীর ছেলে মেহেদী হাসান বিগত ২৮ জানুয়ারী ২০২০ খ্রি. দিবাগত রাতে পাশ্ববর্তী মাঠিয়ালকান্দা গ্রামে ওয়াজ মাহফিল শেষে বাড়ি ফেরার পথে আজাহার মিয়ার হুকুমে ১০/১২ জন তার পথরোধ করে লোহার রড, কাঠের রোল দিয়ে পিটায় এবং মেহেদী হাসানের মুখে বিষাক্ত পদার্থ জোর করে ঢেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। আহত মেহেদীর ডাক-চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে পাশ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০ খ্রি. ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাড়ি আনার পর ৪ ফেব্রুয়ারী তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে পুনরায় নরসিংদী জেলা হাসপালে ভর্তি করা হয়। ঔই দিনই রাত ১১.৫ মিনিটে মেহেদী হাসান মৃত্যু বরণ করেন। খবর পেয়ে মাধবদী থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। ৫ ফেব্রুয়ারী নিহত মেহেদী হাসানের পিতা মোঃ হোসেন আলী বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মাধবদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মাধবদী থানা মামলা নং- ৩(২)২০২০ ধারা:- ১৪৩/ ৩৪১/ ৩২৩/ ৩২৫/ ৩০৭/৩০২/৩২৮/৩৪/১১৪ দন্ড বিধি। অত্র মামলার এজাহারভুক্ত আসামীরা হচ্ছেন ১।মাটিয়ালকান্দি গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে আসিফ (১৯) ২। মাটিয়ালকান্দি গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে মোঃ সুজন মিয়া (২০) ৩।দড়িকান্দি গ্রামের কামাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল্লাহ (২০) ৪। জিরকুটিয়া গ্রামের সফর আলীর ছেলে ইয়াসিন মিয়া (১৯) ৫। মাঠিয়ালকান্দি গ্রামের মৃত আঃ হারেজ মিয়ার ছেলে আজাহার মিয়া (৩২) ৬। মাটিয়ালকান্দি গ্রামের হাবিজ উদ্দিনের ছেলে কাজল (৩০) সহ আরও অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জন। দীর্ঘ সাড়ে ৭ মাস তদন্ত করে তৎকালীন তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা এসআই সুবল চন্দ্র পাল বাদীর এজাহার নমনীয় আসামী ৬ জনের মধ্যে ৫নং আসামী আজাহার মিয়া ও ৬ নং আসামী কাজলকে অত্র মামলার চার্জশিট থেকে বাদ দিয়ে ৪ জনকে চার্জশিটভুক্ত আসামী করে গত ৩০/০৯/২০২০ খ্রি. জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে জমা দেন।
সাংবাদিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি!
তানিম টিভি লি: এর সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য দেশের কিছু (জেলা ব্যতীত) সকল জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মঠ, সৎ ও সাহসী কিছু পুরুষ ও মহিলা সংবাদদাতা/প্রতিনিধি নিয়োগ করা হবে।
আগ্রহী প্রার্থীরা পূর্ণাঙ্গ জীবন বৃত্তান্ত ই-মেইলে
tanimtvltd.news1@gmail.com