নওগাঁয় নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক স্কুল ছাত্রী (১৪) এর ঘড়ে ঢুকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন একই গ্রামের ৩ সন্তানের জনক এক প্রভাবশালী ব্যাক্তি। এসময় ঐ স্কুল ছাত্রীর চিৎকারে প্রতিবেশী এক নারী এগিয়ে আসলে ঘড় থেকে বেরিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যান ঐ প্রভাবশালী ব্যাক্তি। এসময় কিশোরী স্কুল ছাত্রী লোকলজ্জায় ঘড়ের দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে দিলে, প্রতিবেশী নারীটি ঘটনাটি কিশোরী স্কুল ছাত্রীর ভাবীকে জানালে ভাবি স্কুল ছাত্রীর ঘড়ে গিয়ে দরজা লাগানো দেখে ডাকাডাকি করার পর দরজা খুলে কান্নারত অবস্থায় ভাবিকে তার সাথে ঘটানো সব ঘটনা বলেদেন ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রী। ঘটনাটি গত ১০ জুন ঘটলেও স্কুল ছাত্রীর বাবা না থাকায় ( মারা গেছেন) এবং গ্রামের মধ্যে দরিদ্র পরিবার হওয়ায় এবং ধর্ষণ চেষ্টাকারী খোদাবক্স এর চাচাত ভাই গ্রামের প্রধান মাতব্বর হওয়ার কারনে নাক্কারজনক এ ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাটি গোপনে ভঁয় দেখিয়ে প্রথমে ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করলেও গ্রামের লোকজনের মাঝে জানাজানি হওয়ায় ঘটনার ৩ দিন পর অবশেষে গত ১৩ জুন রবিবার রাত ৯ টারদিকে গ্রামবাসী একটি সালিশ বৈঠকে বসেন, সালিশ বৈঠকে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পরও অপরাধীর বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ পদক্ষেপের উদ্যোগ না নিয়ে ধর্ষণ চেষ্টাকারীকে ৩ টি থাপ্পর ( চর) মারা সহ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন বৈঠকে উপস্থিত মাতব্বররা। তবে ছাত্রীটির যখন বিয়ে হবে সে সময় বিয়েতে জরিমানার ২০ হাজার টাকা খরচ করা হবে এমন কৌশলে জরিমানার সেই ২০ হাজার টাকাও অভিযুক্ত ধর্ষণ চেষ্টাকারী খোদাবক্সের চাচাত ভাই গ্রামের প্রধান মাতব্বর সেকেন্দার ওরফে সেকেন এর কাছেই জমা রাখা হয়।
নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া কিশোরী স্কুল ছাত্রী (১৪) কে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাটি ঘটে সম্পতি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার স্বরুপপুর নিচপাড়া গ্রামে।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে প্রতিবেদক ও তার সহকর্মী মঙ্গলবার সরজমিনে ঐ গ্রামে পৌছালে দরিদ্র স্কুল ছাত্রীটির পরিবারকে ভীতু বা আতংক গ্রস্থ্য অবস্থায় দেখা যায় এবং গ্রামের কিছু নারীকে ছাত্রীটির বাড়ির আশেপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে সাংবাদিক আসার ঘটনাটি জানতে পেরে গ্রামের আরো কয়েকজন এগিয়ে আসেন। প্রতিবেদকের কাছে ভুক্তভোগী ছাত্রীটি জানান, আমি ঘড়ে শুয়ে ছিলাম এসুযোগে একই গ্রামের মৃত বিশুর ছেলে খোদাবক্স (৪৪) আমার ঘড়ে ঢুকে আমার সাথে এমন নোংরামো করেছেন।
আমরা গ্রামের মধ্যে গরীব মানুষ এজন্য ন্যায় বিচার পাইনি জানিয়ে (ভিকটিম) ছাত্রীর ভাবী জানান, মাতব্বররা বসে তাদের ইচ্ছামত বিচার করেছেন, ঘটনার সত্যতা ( প্রমান) পাওয়ার পরই অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে ৩ টি থাপ্পর (চর) মেরে ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে ঘটনাটি আপোষ করেন। এসময় আপনারা কি ন্যায় বিচার পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে স্কুল ছাত্রীর ভাবী আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, গ্রামে বসবাস করতে হলে গ্রামের মাতব্বরদের কথামতই বসবাস করতে হবে জন্যই ন্যায় বিচার না পেলেও মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি জানিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন এঘটনাটি যদি আমাদের সাথে না হয়ে গ্রামের অপর কোন পরিবারে ঘটত সেক্ষেত্রে এমন বিচার হতো না, আর জমিমানার টাকাও মাতব্বরদের কাছেই আছে জানিয়ে ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাইলেও যেহতু গ্রামে বসবাস করতে হবে এজন্য মাতব্বরদের বাইরে গিয়ে আমরা কিছু করতে পারছিনা। আমাদের যে সম্মানহানী হয়েছে সেই সম্মান কি মাতব্বরা ফিরে দিতে পারবেন বলেও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এব্যাপারে গ্রামের প্রধান মাতব্বর সেকেন্দার ওরফে সেকিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রতিবেদককে জানান, গ্রামের লোকজনের সকলের যৌথ উদ্যোগে গ্রামের রাজ্জাক এর বাড়ির খলিয়ানে গত রবিবার রাতে সালিশ বৈঠকে বসা হয়, উক্ত বৈঠক রাজ্জাক, সেকিন মন্ডল, দুলাল ও মিঠুন সহ গ্রামের আরো মাতব্বর ও লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সালিশে উপস্থিত সবার সিদ্ধান্তে দোষী ব্যাক্তির ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং সবাই সিদ্ধান্ত নেই যে, জরিমানার ২০ হাজার টাকা আমার কাছে রাখার। এসময় প্রতিবেদকের প্রশ্নে তিনি জানান, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে আমার কাছে জরিমানার যে ২০ হাজার টাকা রাখা হয়েছে সেই টাকা যখন ঐ স্কুল ছাত্রীর ( ভিকটিমের) বিয়ে হবে সেই বিয়েতে খরচ করা হবে।
এব্যাপারে বক্তব্য নিতে মুঠোফোনে রাজ্জাক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বৈঠকে আমি নিজেও উপস্থিত ছিলাম, এঘটনা তেমন কিছু বিষয় না, সামান্য ব্যাপার জানিয়ে তিনি ঘটনানিয়ে লিখালেখি না করার জন্য বলেন এবং এক পর্যায়ে আরো বলেন, মেয়েটির পরিবার টাকা খোলার জন্য এমন ঘটনা সাজিয়েছে। এসময় প্রতিবেদক পাল্টা প্রশ্ন করেন যে- ভিকটিম স্কুলছাত্রী কি বা তার পরিবার ইতিপূর্বে কি এমনভাবে কারো কাছে থেকে টাকা নিয়েছিলেন কিনা সে প্রশ্নের কোন সদউত্তর না দিয়ে রাজ্জাক বলেন, আমি সহ গ্রামের সকল মাতব্বরদের সীদ্ধান্তে ঘটনাটি আপোষ করা হয়েছে।
এব্যাপারে মুঠোফোনে মহাদেবপুর থাকার ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ এর সাথে যোগাযোগ করাহলে তিনি জানান, এঘটনাটি এখনো কেউ জানাননি, আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম জানিয়ে তিনি বলেন, অতিদ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধী যেই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সাংবাদিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি!
তানিম টিভি লি: এর সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য দেশের কিছু (জেলা ব্যতীত) সকল জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মঠ, সৎ ও সাহসী কিছু পুরুষ ও মহিলা সংবাদদাতা/প্রতিনিধি নিয়োগ করা হবে।
আগ্রহী প্রার্থীরা পূর্ণাঙ্গ জীবন বৃত্তান্ত ই-মেইলে
tanimtvltd.news1@gmail.com