গাবতলী থেকে: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলা কঠোর লকডাউন দুই সপ্তাহ পর শিথিল করেছে সরকার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
ঢাকা থেকে পিরোজপুর যাবেন আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগামীকাল রাতে পিরোজপুরের যাওয়ার জন্য টিকিট কিনতে এখানে এসেছি। সাকুরা পরিবহনে জানতে চাইলাম টিকিট হবে কিনা? তারা বলেন, টিকিট আছে একেবারে পিছনে। ভাড়া চায় ৯০০ টাকা। পাশের সিট ফাঁকা যাবে কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, এটা বলা যাচ্ছে না। সিটে যাত্রী যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। প্রতিটি সিট বিক্রি করা হচ্ছে।
অভিযোগ করে আরিফুল বলেন, পরিবহনগুলো সরকারের দেওয়া নির্দেশনা না মেনে প্রতিটি সিট বিক্রি করছে। আর ভাড়া দ্বিগুণ নিচ্ছে। এটা তো এক প্রকার ডাকাতি। এই অনিয়ম দেখার কেউ নেই!
সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গাড়ি এলে তারপর টিকিট বিক্রি করছি। আগে একসাথে এক পরিবারের যাত্রীরা গেলে তখন ডাবল সিটে যাত্রী নিতাম।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই সিটে যাত্রী নেওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে ম্যাজিস্ট্রেট তিন হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। যেসব যাত্রীদের কাছে একসাথে দুই সিটের টিকিট বিক্রি করেছিলাম তাদের টাকা ফিরিয়ে দিয়েছি। এখন আর ডাবল সিটে যাত্রী নেই না।
কাউন্টার মাস্টার সাখাওয়াত আরও বলেন, রাস্তায় গাড়ি নামানো মানেই হচ্ছে খরচ আর খরচ। গাড়ি রাস্তায় নামালে রাস্তার একটা খরচ থাকে, আবার মোবিল খরচও আছে। ইঞ্জিনে কোনো সমস্যা হলে সেই খরচও আছে। ঢাকা থেকে যদি বরিশাল যাই তাহলে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকার মতো খরচ আছে। এদিকে অর্ধেক যাত্রী এবং ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি নিলে মোট ভাড়া আসে ১৬ হাজার টাকা। এখন বলেন কীভাবে একটা বাস রাস্তায় নামাই? এতে মালিকের কী থাকবে আর আমাদের কী বেতন দেবে?
তিনি বলেন, শুধু আমরা না অনেক পরিবহন গোপনে গোপনে দ্বিগুণ ভাড়া এবং শতভাগ সিট বিক্রি করছে। আর আমাদের মালিক পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমাদের আসলে কিছু করার নেই।
সরজমিনে ঘুরে হানিফ, কমফোর্ট লাইন, দিগন্ত, এসবি, জামান এন্টারপ্রাইজসহ আরও কয়েকটি পরিবহনকে সরকারি নির্দেশনা মেনে টিকিট বিক্রি করতে দেখা যায়। গাবতলী বাস টার্মিনালে সকাল থেকে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভিড় কমতে থাকে।
হানিফ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার জাকির মোল্লা বলেন, রাস্তায় গরুর ট্রাকের কারণে এবং ফেরিঘাটে জ্যাম আছে। এ কারণে আমাদের গাড়ি ঢাকায় আসতে দেরি হচ্ছে। গাবতলীতে গাড়ি না আসা পর্যন্ত আমরা যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করছি না। আমরা অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখেই যাত্রীদের নিয়ে যাচ্ছি।
১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস, লঞ্চ, ট্রেন অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। এ সময়ে সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করে সব কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ঈদ শেষে আবারও ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে কঠোর বিধি-নিষেধ শুরু হয়ে চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব মোতায়েন থাকবে। বন্ধ থাকবে গণপরিবহন, অফিস, শপিংমল ও কলকারখানা।