ঢাকাসোমবার , ১৯ জুলাই ২০২১
  1. অনান্য
  2. অর্থ ও বাণিজ্য
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. ইসলাম
  7. কিশোরগঞ্জ
  8. কুড়িগ্রাম
  9. কুমিল্লা
  10. কুষ্টিয়া
  11. কৃষি
  12. খেলাধুলা
  13. খোলা কলাম
  14. গাইবান্ধা
  15. গাজীপুর
আজকের সর্বশেষ সবখবর

চায়ের দোকানদার এখন প্রভাষক 

350
Tanim Tv
জুলাই ১৯, ২০২১ ৫:৫৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

জুলকার নাইন চাঁপাইনবাবগঞ্জ : স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন দেশের সবচেয়ে সেরা ও র‍্যাংকিংয়ের এক নম্বর কলেজ থেকে।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলেও কেড়েছিলেন সকলের নজর। মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষায় নিজ বিদ্যালয়ের হয়ে প্রথম ছাত্র হিসেবে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় টিউশনি করে ব্যাপক সুনাম রয়েছে তার। এতোকিছুর পরেও সারোয়ার জাহান সাঞ্জু তার এলাকার সবার কাছে পরিচিত চায়ের দোকানদার হিসেবেই।
একজন মেধাবী হওয়ার চেয়ে পরিশ্রমী হওয়ার চেষ্টা করুন। অনেক মেধাবী দেখেছি, যারা পরিশ্রমের অভাবে সফল হতে পারেনি। তবে, এমন অনেক পরিশ্রমী দেখেছি, যারা পরিশ্রম করে মেধার সাক্ষর রেখেছে। আপনি কতটা মেধাবী, দৈনিক সে হিসাব না কষে চিন্তা করবেন, দৈনিক কত ঘন্টা পড়লেন বা কাজ করলেন। সময়ের ব্যবধানে দেখবেন আপনিও সমাজের চোখে বাস্তবে একজন মেধাবী। এমনটাই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন চাওয়ালা থেকে প্রভাষক হওয়া সারোয়ার জাহান সাঞ্জু।
তাইতো ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি বাবাকে চায়ের দোকানে সহযোগিতা করে আসছেন৷ লেখাপড়া শেষ করে দিনের পুরো সময় বাবার চায়ের দোকানে কাজ শুরু করছেন। চা বানিয়ে নিজেই পরিবেশন করছেন।
এমনকি এখন চায়ের দোকানে কাজের পাশাপাশি তিনি টিউশনও করেন। শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতিও নেন। তবে সেই প্রস্তুতিটাও চায়ের দোকানেই। বাড়িতে উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় দোকান বন্ধ করে দেয়ার পর দোকানেই শুরু করেন চাকুরির জন্য পড়াশোনা।
প্রতিদিন দুপুর ও রাতে পড়া শেষ করেই ফেরেন বাড়ি। এভাবেই এনটিআরসিএ কর্তৃক শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হয়েছেন চা দোকানী সারোয়ার জাহান সাঞ্জু।
সারোয়ারের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বারোঘরিয়া ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামে। তার বাবা মো. শাহজাহান আলীর গত ৩২ বছর ধরে বারোঘরিয়া বাজারে চায়ের দোকান রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) রাতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বাংলাদেশে বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের ফল প্রকাশ করে। ওই ফলাফল অনুযায়ী, সারোয়ার জাহান সাঞ্জু বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সৈয়দ আহম্মদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
জন্ম থেকেই দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে সারোয়ার জাহানকে। ৪ ভাই-বোনের মধ্যে সারোয়ার বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। বারোঘরিয়া ৩৭ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে ২০০১ সালে পঞ্চম শ্রেনী পাস করেন সারোয়ার। এরপর চামাগ্রাম হেনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন তিনি।
এতে নিজ বিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম ছাত্র হিসেবে জিপিএ-৫ পান সাঞ্জু। এরপর ২০০৮ সালে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্ব দেখান তিনি।
এইচএসসি পাশের পর দেশের সেরা ও র‍্যাংকিংয়ের এক নম্বর রাজশাহী সরকারি কলেজের রয়াসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করেন মেধাবী ছাত্র সারোয়ার।
সারোয়ার বলেন, আমার জীবনে কষ্টের অভাব ছিলো না, চারদিকে ছিল শুধুই অন্ধকার। ছোটবেলায় ভালোভাবে খেতে পাইনি। নোংরা জামা-কাপড় পড়ে ঘুরে বেরিয়েছি, তবুও কখনও নিজের পড়াশোনা বাদ দেয়নি।
বারোঘরিয়া বাজারে সরকারি জায়গায় একটি চালা দেয়া বাবার চায়ের দোকান৷ ২০০১ সালে ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় থেকেই চায়ের দোকানে বাবাকে কাজে সহযোগিতা করতে থাকি। স্কুল-কলেজে যাওয়া বাদে বাকি সময় কাটতো চায়ের দোকানে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এভাবেই চলে চায়ের দোকান চালানো।
তিনি আরও বলেন, এইচএসসি পাশের পর রাজশাহী কলেজে ভর্তি হলেও সেখানে থেকে ক্লাস করা হয়নি। কারন চায়ের দোকান চালাতে হবে। তাই ফজরের সময় বেরিয়ে রাজশাহীতে ক্লাস শেষে বিকেল ৩টার মধ্যে বাড়িতে ফিরতে হতো।
চায়ের দোকানের পাশাপাশি চলতে থাকে টিউশনি। ২০১৬ সালে মাস্টার্স শেষ হওয়ার পর পুরো সময় চায়ের দোকানে কাজ করি। ফজরের সময় দোকান খুলে ১০টা পর্যন্ত যা উপার্জন হয়, তা দিয়ে চাল-ডাল, তরকারি কিনে বাবা বাসায় চলে যান। কারন হৃদরোগের কারনে মা অসুস্থ থাকায় বাবা রান্না করেন।
কঠোর পরিশ্রমী ও মেধাবী সারোয়ার জাহান সাঞ্জু বলেন, সকাল ১০টায় বাবা যাবার পর দোকান বন্ধ করে চাকুরীর পড়া শুরু করি। দুপুর ১টা বাজলে বাসায় যায়।
আবার বিকেলে এসে রাত ৮টায় দোকান বন্ধ করে বাবা বাসায় যায়। কিন্তু আমি দোকানে বসেই রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পড়ে বাসায় যায়। বন্ধ করার পর দোকানেই বসে পড়ার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাসায় অনেক লোকজন ও পড়ার উপযুক্ত কোন পরিবেশ নেই। তাই দোকানে বসেই পড়ি। বাড়িতে একদিনের জন্যেও পড়া হয়নি।
এভাবে পড়াশোনার পাশাপাশি দোকান চালিয়ে ছোট দুই বোনের বিয়ে দিয়েছেন। সারোয়ারের ছোট ভাই নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করে। সারোয়ার জাহান সাঞ্জু জানান, নিয়োগপ্রাপ্তির খবরে আমার থেকে বাবা-মা আরও বেশি খুশি হয়েছে। আল্লাহর অশেষ কৃপায় জায়নামাজে থাকা অবস্থায় মাকে এই খুশির খবরটি দিতে পেরেছি। সেদিন বাবার মোবাইলে যতগুলো ফোন নাম্বার ছিল সবাইকে খুশির খবরটি রাত ২টা পর্যন্ত সবাইকে ফোন করে বলছিলো।
রবিবার (১৮ জুলাই) রাতে চায়ের দোকানে কাজ করা অবস্থায় সারোয়ার জাহান আরও জানান, প্রভাষক হিসেবে নিয়োগেই আটকে থাকতে চাই না। শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়ার পর বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় এখন আমার প্রধান লক্ষ্য।

সাংবাদিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি! তানিম টিভি লি:  এর  সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য দেশের কিছু (জেলা ব্যতীত) সকল জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মঠ, সৎ ও সাহসী কিছু পুরুষ ও মহিলা সংবাদদাতা/প্রতিনিধি নিয়োগ করা হবে। আগ্রহী প্রার্থীরা পূর্ণাঙ্গ জীবন বৃত্তান্ত ই-মেইলে tanimtvltd.news1@gmail.com