ঢাকারবিবার , ২২ আগস্ট ২০২১
  1. অনান্য
  2. অর্থ ও বাণিজ্য
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. ইসলাম
  7. কিশোরগঞ্জ
  8. কুড়িগ্রাম
  9. কুমিল্লা
  10. কুষ্টিয়া
  11. কৃষি
  12. খোলা কলাম
  13. গাইবান্ধা
  14. গাজীপুর
  15. চাকরি
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসে

350
Tanim Tv
আগস্ট ২২, ২০২১ ৪:১৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আব্দুস সামাদ, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: ঘুষ ছাড়া কোন কাজই হয় না বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সাতক্ষীরা জেলা অফিসে। ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোটরযান রেজিষ্ট্রেশন, ফিটনেস, শ্রেণি পরিবর্তন, রুট পারমিট, সরকারি প্রতিবেদনসহ সর্বক্ষেত্রে দিতে হয় রেশিও অনুসারে ঘুষ। ঘুষের টাকা ঠিকঠাকভাবে না পেলে ফাইলে ভুল আছে জানিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। দালালের মাধ্যমে কাজ না করলে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস। কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে বেড়ে যায় ঘুষের পরিমান। বিআরটিএ জেলা কার্যালয়কে ঘিরে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন দালালের মাধ্যমে ঘুষের টাকা ৭০% গ্রহন করে থাকেন অফিস সহায়ক সাতক্ষীরা মো. আব্দুল গফফার। আদায়কৃত ঘুষের টাকার ৩৫% নেন সহকারি পরিচালক (ইঞ্জি:) এ এস এম ওয়াজেদ হোসেন।

একাধিক গ্রাহক, শো-রুম মালিক এবং ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মোটরযান এনডোর্সমেন্ট, মোটরযানের রেজিষ্ট্রেশন, ফিটনেস সার্টিফেকেট, স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোটরযানের শ্রেণী পরিবর্তন বা সংযোজন/ ধরণ পরিবর্তন / অন্তর্ভুক্তি / পিএসভি / তথ্য সংশোধন, ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট, রুট পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ সাতক্ষীরা বিআরটিএ কার্যালয়ে যে কোন কাজ করতে গেলে দিতে হয় মোটা অঙ্কের ঘুষ। কার্যালয়টির সামনে ছদ্মবেশী দালাল, শো-রুম আর ভিতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাহীন ঘুষ বানিজ্যে দিশেহারা হয়ে পড়ে মোটরযান মালিকরা। শুধু তাই নয় দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার এ কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিত্যদিনের সঙ্গি।

সরেজমিনে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহে দুই দিন ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার জন্য পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রতি পরীক্ষায় প্রায় দুইশ জন প্রার্থী অংশ নেয়। মাঠে প্যাকটিক্যাল পরীক্ষার সময় সকলকে লাইনে দাড় করিয়ে পরীক্ষার নিয়োম সম্পর্কে বলে দেওয়া হয়। এসময় মাইকে বলা হয় এখানে কোন প্রকার ছবি তোলা বা ভিডিও করা যাবে না। পরীক্ষায় যা হোক সেটা আমরা দেখবো। পরে ভাইভা এবং লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। ফলাফল প্রকাশের সময় দেখা যায় যারা প্যাকটিক্যাল পরীক্ষার পাশ করতে পারেনি তারাও পাশ করেছ।

খোজ নিয়ে জানা যায়, শুধু মোটরসাইকেল অথবা শুধু হালকা মোটরযান অর্থাৎ যে কোনো এক ধরণের মোটরযান লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ৩৪৫ টাকা এবং মাটরসাইকেল ও হালকা মোটরযান একসাথে অর্থাৎ মোটরসাইকেলের সাথে যে কোনো এক ধরণের মোটরযান লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ৫১৮ টাকা ব্যাংকের মাধ্যে জমা দিতে হয়। এ টাকা জমার পর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুয়োগ দেওয়া হয। পরীক্ষায় পাশ করার পর স্মার্ট কার্ড গ্রহণের জন্য ৫ বছরের নবায়ন ফিসহ পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি এক হাজার ৬৮০ টাকা এবং ১০ বছরের নবায়ন ফিসহ অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি দুই ৫৪২ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়।

খোজ নিয়ে আরও জানা যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স করিয়ে দিতে জেলা কার্যালয়কে ঘিরে ১৫ থেকে ২০ জন দালাল রয়েছে। যারা প্রতি প্রার্থীর কাছ থেকে সাড়ে ৬ হাজার করে টাকা নিয়ে অফিস সহায়ক আব্দুল গফফারের মাধ্যমে অফিসে ঘুষ হিসেবে দেয় দুই হাজার টাকা। সপ্তাহে দুই দিন পরীক্ষা হয়ে থাকে। প্রতি পরীক্ষায় প্রায় দুইশ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। অংশ নেওয়া এসব পরীক্ষার্থীর প্রায় ৭০% লোকই আব্দুল গফফারের দালালের মাধ্যমে অফিসে টাকা দিয়ে থাকে। আবার পরীক্ষায় পাশ করে অফিসে ফাইল জমা দিতে গেলে মাস্টার রোলের কর্মচারী শরিফকে দিতে হয় আরও দুইশ টাকা। এ টাকা না দিলে অফিসে ফাইল জমা নেওয়া হয় না। নানা ভুল ধরে ফাইল ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

খোজ নিয়ে আরও জানা যায়, নতুন গাড়ী রেজিষ্ট্রেশন করতে সাতক্ষীরার শো-রুম থেকে বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টাল (বিএসপি) করা হলে ফাইল প্রতি দিতে হয় পাঁচশত টাকা এবং বাহিরের ফাইল হলে দিতে হয় এক হাজার টাকা। একই সাথে সকল প্রকার স্মার্ট কার্ডে আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার সময় একশ টাকা এবং কার্ড গ্রহনের সময়ে দিতে হয় আরও একশ টাকা।
খোজ নিয়ে আরও জানা যায়, মোটরযানের শ্রেণী পরিবর্তন বা সংযোজন/ধরণ পরিবর্তন/অন্তর্ভুক্তি/পিএসভি/করতে হলে প্রতি ফাইলে দিতে হয় কমপক্ষে এক হাজার টাকা। টাকা না দিলে ফাইলে ভুল আছে জানিয়ে ফেরত দেওয়া হয়।
আরও জানা যায়, গ্রাহক মোটরযানের ফিটনেস ইস্যু/নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে মোটরযান পরিদর্শক সরেজমিনে মোটরযানটি দেখে এক বছরের জন্য ফিটনেস ইস্যু/নবায়ন করেন। যেসব গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়া হয় তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় এক হাজার পাঁচশত থেকে তিন হাজার টাকা। গাড়ির রুট পারমিট নিতে হলেও দিকে হয় একই পরিমান টাকা।
আরও জানা যায়, কোন সরকারি দপ্তর থেকে গাড়ির প্রতিবেদন চাইলে নানা ভাবে গাফিলতি করা হয়। এরপর টাকা নিয়ে দেওয়া হয় প্রতিবেদন।
অফিসে খোজ নিয়ে দেখা যায়, সহকারি পরিচালক (ইঞ্জি:) এ এস এম ওয়াজেদ হোসেন নিয়োমিত অফিসে আসেন না। খোজ করলে অফিস থেকে বলা হয় স্যার ছুটিতে আছেন। পরবির্ততে বাসা থেকে ফাইল স্বাক্ষর করানো হয় বলে জানা যায়।
খোজ নিয়ে আরও জানা যায়, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সাতক্ষীরা অফিসে সরকারি স্টাফ রয়েছে ৪ জন। এরা হলেন- সহকারি পরিচালক (ইঞ্জি:) এ এস এম ওয়াজেদ হোসেন, মোটরযান পরিদর্শক মোঃ নাসিরুল আরিফিন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক সাইফুল ইসলাম ও অফিস সহায়ক মো. আব্দুল গফফার। এর ছাড়া মাস্টার রোলে কাজ করেন আরও ৫/৬ জন। প্রতি মাসে বিআরটিএ সাতক্ষীরা জেলা কার্যালয়কে যে ঘুষ নেওয়া হয় তার ৭০% টাকা গ্রহণ করেন অফিস সহায়ক মো. আব্দুল গফফার। ১৫ থেকে ২০ জন দালালের মাধ্যমে তিনি এ টাকা গ্রহণে করে থাকেন বলে জানা গেছে। মাসে আদায়কৃত ঘুষের টাকার ৩৫% নেন সহকারি পরিচালক (ইঞ্জি:) এ এস এম ওয়াজেদ হোসেন, ২৫% নেন মোটরযান পরিদর্শক মো. নাসিরুল আরিফিন এবং বাকি ৪০% ভাগ নেন সংশ্লিষ্ট অন্য সকলে।
বিআরটিএ সাতক্ষীরা অফিসের ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ করতে সর্বশেষ ২০১৯ সালে ২ জুলাই অভিযান পরিচালনা করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসময় যানবাহনের কাগজপত্র তৈরি করে দেওয়ার নামে প্রতারনার অভিযোগে তিন দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হল- সদর উপজেলার বাঁশদহা গ্রামের জিয়াউল হক, একই গ্রামের সাইফুল আলম ও সাতানি গ্রামের আল আমিন সরদার। এর সময় জিয়াউলকে ৩০ দিন এবং অপর দুই জন সাইফুল ও আল আমিনকে ১৫ দিন করে জেল দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজল মোল্লা। আর পর থেকে কৌশল পরিবর্তন করে নেয়া হয় ঘুষ।
এ বিষয়ে বিআরটিএ সাতক্ষীরা অফিসের অফিস সহায়ক মো. আব্দুল গফফার বলেন, আমি সাধারণত কাউন্টারে থাকি। সেখানে আপনি আসলে দেখতে পারবেন। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আছে সে গুলো ভিত্তিহীন। আর এসব বিষয়ে আমার সাথে কথা না বলে স্যার দের সাথে কথা বললে ভালো হয়।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিআরটিএ সাতক্ষীরা অফিসের মোটরযান পরিদর্শক মো. নাসিরুল আরিফিন ও সহকারি পরিচালক (ইঞ্জি:) এ এস এম ওয়াজেদ হোসেনের মোবাইলে কয়েক বার কল করা হলে মোবাইল বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

 

সাংবাদিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি! তানিম টিভি লি:  এর  সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য দেশের কিছু (জেলা ব্যতীত) সকল জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মঠ, সৎ ও সাহসী কিছু পুরুষ ও মহিলা সংবাদদাতা/প্রতিনিধি নিয়োগ করা হবে। আগ্রহী প্রার্থীরা পূর্ণাঙ্গ জীবন বৃত্তান্ত ই-মেইলে tanimtvltd.news1@gmail.com