মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা বছরকে বারটি মাসে বিভক্ত করেছেন। এবং প্রতিটি মাসকেই ইসলাম ধর্ম মতে ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদায় মর্যাদাপূর্ণ করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আরবি মাসের যিলকদ মাসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাশালী একটি মাস। ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানদের কাছে এই মাসটির গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম, কেননা ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম তৃতীয় স্তম্ভ পবিত্র হজ পালনার্থে সারা পৃথিবীর মুসলমানদের মধ্য থেকে স্বাধীন, জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি, প্রাপ্ত বয়স্ক নারী পুরুষ, অর্থনৈতিক স্বচ্ছল ব্যক্তিগণ কাবা অবি মুখে রওনা করেন পবিত্র এই মসটিতে, আর তাদের একটিই উদ্দেশ্য ফরজ ইবাদত পবিত্র হজ্জ পালনের মাধ্যমে কাবার মালিক মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন।

হাদিস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন। হাদিসটি হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? জবাবে তিনি বলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান বিশ্বাস বা স্থাপন করা, পুনরায় আবার প্রশ্ন করা হলো কোন আমলটি সবচেয়ে উত্তম? জবাবে তিনি বলেন আল্লাহর পথে জিহাদ করা, পুনরায় আবারো প্রশ্ন করা হলো ইয়া রাসূল আল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন আমলটি সবচেয়ে উত্তম? জবাবে তিনি বললেন হজ্জে মাবরুর, তথা মকবুল হজ (বোখারী ও মুসলিম) আর মকবুল হাজের একমাত্র প্রতিদান জান্নাত।
হজে মাবরুর হচ্ছে সেই হজ, যাতে কোন গুনাহ সংঘটিত হয়নি, কারো কারো মতে মকবুল হজ্জকেই হজ্জে মাবরুর বলা হয়। আবার কোন কোন আলেম গণের মতে যে হজ লোক দেখানো ও আত্মপ্রচার হতে মুক্ত সেটাই মাবরুর হজ্জ বা মকবুল হজ্জ। আবার কেউ কেউ বলেন যে হজের পর গুনাহ হয় না সে হজকে মাবুরুর হজ বলা হয়, হযরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন যে হজের পর দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি জন্মে এবং আখিরাতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয় সেটাই হাজে মাবরুর। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজ পালন করবে এবং হজ্ব সমাপনকালে স্ত্রী সম্ভোগ কিংবা তদ সম্পর্কিত আলোচনা এবং কোন প্রকার গুনাহের কাজে লিপ্ত হবে না সে সদ্যজাত শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরবে (বুখারী ও মুসলিম)
বর্ণিত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যদি কেউ পরিপূর্ণ এখলাসের সাথে হজের নিয়ত করে এবং ইহরাম বাধার সময় হতে হজের যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ বর্জন করে চলে আর কোন প্রকার গুনাহের কাজে লিপ্ত না হয়, তাহলে এতে করে তার সমস্ত পাপ মোচন হয়ে যাবে । এবং অধিক পরিমাণ তওবা ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে কবিরা গুনাহ গুলো মাফ হয়ে যাবে। হজ একটি ফরজ ইবাদত যা পালন করা আমাদের দায়িত্ব, কিন্তু এটি আল্লাহতালার অপার অনুগ্রহ যে, হজ পালনের কল্যাণে শুধু যে আমাদেরকে দায়মুক্তই করে দেয়া হচ্ছে তা নয়, বরং হজ পালনের সাথে সাথে আমাদের সকল পাপ পঙ্কিলতা গুনাহ সমূহ গুলোকে ক্ষমা করে দেওয়া হচ্ছে, এবং চিরস্থায়ী আনন্দ ও সুখ দ্বারা পুরস্কৃত করা হচ্ছে , আর পরম সত্যবাদী মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জবানিতে জান্নাতী হবার সুসংবাদ দান করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!!!
পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে কাবা অভিমুখে রওনাকারী মুসাফির মহাসম্মানিত আল্লাহর মেহমান সম্মানিত হাজীগনকে আল্লাহ তায়ালা হজে মাবরুর নসিব করুন, হজের সফর ও সকল আনুষ্ঠানিকতা তাদের জন্য সহজ করুন। এবং আমাদের জন্য জীবনে অন্তত একটিবারের জন্য হলেও কাবা অভিমুখে রওনা হয়ে বাইতুল্লাহ শরীফের চতুরপাশ প্রদক্ষিণ করার ও প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র রওজা শরীফ কে সামনে নিয়ে প্রাণভরে সালাতু সালাম পড়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: হাফেজ মাওলানা মুফতি মূর্তাজা ইবনে মোস্তফা সালেহী।
পরিচালক: আল মোজাদ্দেদিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা।