রোববার (১ আগস্ট) থেকে রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দিয়েছে সরকার। পথে সীমাহীন দুর্ভোগ সয়ে ঢাকা তথা কর্মস্থলে ফিরেছেন শ্রমিক ও কর্মকর্তারা। শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরাতে বাস ও লঞ্চ সাময়িকভাবে জন্য খুলে দেয়ার পর সোমবার থেকে তা আবার বন্ধ রয়েছে। তাই ঢাকাসহ এর আশেপাশের এলাকায় কর্মস্থলে ফেরা শ্রমিকদের যুদ্ধ এখন অফিস ও কারখানায় আসা-যাওয়ার।

সোমবার (২ আগস্ট) সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, অফিসগামী মানুষের ভিড়, কিন্তু কোনো গণপরিবহন চলছে না। তাই অসহায় মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পিকআপ ভ্যান, ট্রাকে করে অফিস-কারখানায় যাচ্ছেন। কেউ গাদাগাদি করে ভ্যানগাড়িতে করে যাচ্ছেন। যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো তাদের কেউ যাচ্ছেন রিকশায়, কেউ মোটরসাইকেলে। তবে সবাইকেই কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন মফিজুল ইসলাম। তিনি মালিবাগের একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘অফিস খোলায় কষ্ট করে কুমিল্লা থেকে ঢাকা এসেছি। গতকাল বাসেই চড়েই অফিস করছি। আজ থেকে আবার বাস নেই। আমরা কী করবো বলেন? সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি, এখন বাজে পৌঁনে ৯টা। লকডাউনে বাস না খুলে অফিস খোলায় দুর্ভোগ তো আগেও হয়েছে। সেটা জানার পরও কেন এই সিদ্ধান্ত?’
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একটি পিকআপ থামতেই অপেক্ষমান যাত্রীরা হুড়মুড় করে উঠতে থাকেন। অনেকেই অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে পিকআপে ওঠেন। আগে ওঠা যাত্রীরা কাউকে কাউকে হাত ধরে টেনে তুলছেন। মুহূর্তেই ছোট্ট পিকআপটি মানুষে ভরে যায়। মানুষে ঠাসা ছোট পিকআপটি হেলেদুলে ছুটতে থাকে যাত্রাবাড়ীর দিকে।
যাত্রাবাড়ীর একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পাঁচ টাকার ভাড়া ভ্যানে চাইছে ৫০ টাকা। এটুক (এতটুকু) পথ ৫০ টাকার দিতে কষ্ট লাগতাছে। আরও একটু দেখাতাছি, কমে যাইতে পারি কিনা!’
রামপুরার একটি গার্মেন্টসের কর্মী রায়হান। তিনি থাকেন মেরাজনগর এলাকায়। রায়হান বলেন, ‘সকাল থেকে নানাভাবে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। অফিসের সময়ও চলে যাচ্ছে। তাই মোটরসাইকেলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। অনেক ভাড়া চাইছে। খুব বিপদে আছি ভাই।’ এই বলেই এক মোটরসাইকেলের দিকে ছুটে যান তিনি।
জনপ্রতি ১০০ টাকা করে ভাড়ায় রায়েরবাগ-শনির আখড়া যাত্রী পরিবহন করছে ভ্যানগাড়িগুলো। এই দূরত্বে বাস ভাড়া ১৫ টাকা। কিন্তু ১০০ টাকা দিয়েও ভ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। খালি ভ্যান আসলেই হুড়মুড়িয়ে উঠে যাচ্ছেন যাত্রীরা।
মো. সোহেলের কর্মস্থল মালিবাগে। একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন তিনি। কয়েকবার পিকআপ ভ্যানে ওঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। তার কণ্ঠে ক্ষোভ- ‘ভাই, বলেন তো দেশ কারা চালায়! মানুষের জীবন দুঃখ-কষ্ট নিয়া, একটু ধারণা থাকলে তারা বাস বন্ধ রাইখ্যা কারখানা খুলে দিত না। কারখানাগুলা তো কোনো গাড়ির ব্যবস্থা করে নাই। তাগো (তাদের) কথা, চাকরি করলে আসতে অইব (হবে)।’
কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে গতকাল ১ আগস্ট থেকে রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দিয়েছে সরকার। এই ঘোষণার পর শনিবার ঢাকামুখী মানুষের ঢল নামে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ঈদে বাড়ি গিয়ে কঠোর বিধিনিষেধে আটকেপড়া শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে সীমাহীন দুর্ভোগ সয়ে কর্মস্থলে ফিরতে থাকেন। এই পরিস্থিতিতে সাময়িক সময়ের জন্য বাস ও লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ায় গত কয়েক মাস ধরে বিধিনিষেধ আরোপ করে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সরকার। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আটদিনের জন্য শিথিল করা হয়েছিল বিধিনিষেধ। এরপর আবার গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত থাকবে এই বিধিনিষেধ।
বিধিনিষেধে সব ধরনের গণপরিবহন, সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ আছে। খাদ্যপণ্য উৎপাদন-প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া পরিবহন-সংরক্ষণ ও ওষুধ খাত ছাড়া বন্ধ ছিল সব ধরনের শিল্প-কারখানা। এখন রফতানিমুখী শিল্প-কারখানাকেও বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।